‘ভাস্কর্যবিরোধী ধর্মীয় উন্মাদনা’ দমনের আহ্বান সাবেক ছাত্রনেতাদের

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের নেতাদের প্রতিক্রিয়াকে ‘ভাস্কর্য বিরোধী ধর্মীয় উন্মাদনা’ আখ্যা দিয়ে তা কঠোর হাতে দমন এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2020, 06:16 PM
Updated : 29 Nov 2020, 06:16 PM

নয়টি ছাত্র সংগঠনের ১৬ জন সাবেক নেতা রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান।

মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হয়েছে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী কয়েকটি দল।

হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুবনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম ভাস্কর্যকে ‘শরিয়তবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ।

এর প্রতিবাদ জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতারা বিবৃতিতে বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বেশ কিছুদিন ধরে ভাস্কর্য নিয়ে এক ধরনের ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ভাস্কর্য শিল্পকর্ম- এটা জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, জাতীয় বীর, নেতা, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রাণী, ফল, ফুল যে কোনো বিষয়েই নির্মিত হতে পারে। এটা নিয়ে অহেতুক বির্তকের কোনো সুযোগ নেই।”

সব ভাস্কর্য ‘ভেঙে ফেলার’ ঘোষাণার মাধ্যমে ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’ ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত ‘শহীদ মিনার’ এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ও মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্যও ‘ভেঙে ফেলার উসকানি’ দিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

সেখানে বলা হয়েছে, “তারা বাঙালি রাষ্ট্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধের উম্মাদনা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছে। এ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হাজার বছরের বাঙালির ঐতিহ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস, মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িকতাসহ সকল অর্জনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

“আমরা দেশের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল সকল শক্তিকে একতাবদ্ধ হয়ে ভাস্কর্যবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীদের এক চুলও ছাড় না দিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।”

ভাস্কর্যবিরোধীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সাবেক ছাত্রনেতারা বলেছেন, “ভাস্কর্যবিরোধী অন্ধকারের অপশক্তি ধর্মীয় উন্মাদনা ও বিশঙ্খলা সৃষ্টিকারী উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কঠোর হস্তে দমনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের(জাসদ) সাবেক সভাপতি শরিফুল কবির স্বপন,  বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন,  বাংলাদেশ ছাত্র  ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সামসুল আলম সজ্জন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি হাসান ইমাম রুবল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি আবু নাসের অনিক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ।

এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র লীগের (জাসদ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান তরুন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, ছাত্র জোটের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক মাসুম উদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন, জাতীয় ছাত্র ঐক্যের সাবেক সভাপতি জুয়েল আহমেদ খান, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক  মুক্তার হোসেন নাহিদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান সমুদ্র, ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শুভাশিস সমাদ্দার শুভ, বাংলাদেশ ছাত্র সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ রয়েছেন বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে।