খালেদার সঙ্গে ‘সুখ-দুঃখের আলাপ’ বিএনপি নেতাদের

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দুই মাসের বেশি সময় পর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2020, 06:15 PM
Updated : 1 August 2020, 06:50 PM

শনিবার কোরবানির ঈদের রাতে বিএনপি প্রধানের গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ গিয়ে সাক্ষাৎ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন এই সাক্ষাতে।

বিএনপি নেতারা রাত ৮টায় ‘ফিরোজায়’ প্রবেশের পর পিপিই পরে দোতলায় ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসেন। পরে সেখানে আসেন নেত্রী খালেদা জিয়া।
 
ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক শেষে বেরিয়ে ফিরোজার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দীর্ঘদিন পরের এই সাক্ষাতে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “আমরা কথা বলেছি ঈদের দিনে যেসব কথা বলা হয়। এতদিন ধরে আমরা একসাথে কাজ করছি, সকলের সুখ-দুঃখের কথা-বার্তা আছে।

“আপনারা জানেন ইতোমধ্যে আমাদের দলেরই অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মী করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাদের সম্পর্কে কথা হয়েছে, তাদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে কথা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে, অনেকে চলে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে বলা যেতে পারে সুখ-দুঃখের আলাপ হয়েছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “কোভিড সংক্রমণের বর্তমান যে অবস্থা, বন্যার যে অবস্থা, দেশের অর্থনীতির যে পরিণতি হতে যাচ্ছে- সে সম্পর্কে বিষদভাবে আ্লোচনা হয়েছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষেরা তাদের যে নিদারুণ কষ্ট আর কিছু দিন পরে কী অবস্থা দাঁড়াবে সে নিয়ে কথা হয়েছে।

“আলোচনার বেশিরভাগ সময় ছিল কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি ও বন্যা পরবর্তী অবস্থা কী হবে যেহেতু শোনা যাচ্ছে এবারকার বন্যা দীর্ঘমেয়াদি বন্যা থাকবে। তাহলে দেশের বন্যা কবলিত মানুষ কীভাবে পুনর্বাসিত হবে, কৃষকরা কীভাবে থাকে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

দলীয় প্রধানের নির্দেশনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই কোভিডে জনগণের পাশে দাঁড়ানো, বন্যা পরবর্তীতে যে সমস্যা দাঁড়াবে তার জন্য তাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব কর্মীদেরকে-নেতাদেরকে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।”

গত ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাড়ি ফিরোজায় ওঠেন খালেদা জিয়া; তারপর থেকে সেখানেই আছেন তিনি। ছবি: বাবুল তালুকদার

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তিনি বলেন, “ম্যাডাম এতই অসুস্থ যে নিজে বাসার নিচে নামতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। তার এখনও খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা, খেতেও সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন রকমভাবে।

“আসলে ম্যাডামের উন্নত চিকিৎসা যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে না। হাসপাতালেও যাওয়া যাচ্ছে না এখন যে পরিস্থিতি চলছে। সব মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থাটা ভালো না।”

জিয়া এতিমখানা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দি হন। বছরখানেক পুরান ঢাকায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে ছিলেন তিনি। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বছরখানেকের মতো কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এরমধ্যে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিলে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে গত ২৫ মার্চ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর থেকে গুলশানের এই বাসায় আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে চলে আসার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই বিষয়টা নিয়ে এখনও বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। সময় আসলে আলোচনা হবে।”

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেশে বর্তমান যে কোভিড পরিস্থিতি, বন্যা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক যে অবস্থা- এটা তো স্বাভাবিক নয়। এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতিতে উনার বিরুদ্ধে, দেশের সব মানুষের বিরুদ্ধে বিশেষ করে যারা ভিন্নমত পোষণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জুলুম চলছে।

“এর মধ্যে তিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন।”

খালেদা জিয়া মুক্ত হওয়ার পর গত ২৫ মে ঈদুল ফিতরের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রথম এই বাসায় খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। এরপরে আবারও ঈদের দিনে এই সাক্ষাতে ফিরনি, সেমাই ও মিষ্টি দিয়ে দলের নেতাদের আপ্যায়ন করেছেন খালেদা জিয়া।

শনিবার ঈদুল আজহায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আগে সকালে ঈদের নামাজের পড়ে বেলা ১১টার দিকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন।

‘ফিরোজার’ নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকালে ঈদের নামাজের পর খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম এবং ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দর ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা বাসায় আসেন। বোনকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েছেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আসার পর থেকে তার কয়েকজন স্বজন ছাড়া অন্যদের এই বাসায় প্রবেশে কড়াকড়ি রয়েছে।