ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলবদের’ বিচার প্রকৃতিই করেছে: হাছান

বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেই রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কুশীলবদের অনেকের বিচার ‘প্রকৃতিই’ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 July 2020, 02:03 PM
Updated : 16 July 2020, 03:46 PM

তিনি বলেছেন, “তাদের অনেকেরই প্রাকৃতিক বিচার হয়ে গেছে, প্রকৃতি তাদের বিচার করে ফেলেছে।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কারাবন্দি দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে হাছান মাহমুদের এমন মন্তব্য আসে।

২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা-হানাহানির আপাত অবসান ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তখনকার রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জরুরি অবস্থা জারি করার মধ্যে দিয়ে।

ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সেদিন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ওই ঘটনা ‘এক-এগারো’ বা ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিতি পায়। পরের দুই বছরে বহু রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি মামলায় আদালতের মুখোমুখি করা হয়।

দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে রাজনীতিকে নতুন করে সাজানোর কথাও আলোচিত হতে থাকে, যা পরিচিতি পায় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে।

সে সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়; প্রায় ১১ মাস তাকে রাখা হয় সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে।

কারাগারে থাকাকালে শেখ হাসিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় চিকিৎসার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার মুক্তির জোরালো দাবি ওঠে। চাপের মুখে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

ওই বছরই ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এরপর টানা দুটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।

ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলবদের’ বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, তা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন একজন সাংবাদিক।

উত্তরে হাছান মাহমুদ বলেন, “পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, প্রাকৃতিকগতভাবে তাদের বিচার হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরও অনেকের প্রাকৃতিকভাবে বিচার হয়ে গেছে।”

হাছানের ভাষ্য, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের অনেকে ‘ছদ্মাবরণে’ নানা কথা বলে। তাদের গতিবিধির উপর সরকারের ‘নজর আছে’।

“২০০৭ সালের এই দিনে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়েছিল। সে কারণে ১৬ জুলাই শুধু শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস নয়, গণতন্ত্রেরও বন্দি দিবস।

“কিন্তু সেদিন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা অনুভব করতে বাধ্য হয়েছেন যে, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়েও বন্দি শেখ হাসিনা অনেক বেশি শক্তিশালী।… মানুষ সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং সেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে তারা বাধ্য হয়েছিল।”

তবে এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে, তার এ নেতৃত্বের জন্য বিশ্ব ব্যাংক, জাতিসংঘ, পৃথিবীর বরেণ্য নেতৃবৃন্দ যখন প্রশংসা করে, তখনও এক-এগারোর কুশীলবরা ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টায় লিপ্ত।

“যখনই দেশে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমরা দেখতে পাই, তারা দেশে-বিদেশে সক্রিয় হয়, আবার ছোবল মারার অপচেষ্টা চালায়।”

যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রাহমানকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে যেহেতু আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই, সেজন্য আলোপ-আলোচনা চলছে। আমি মনে করি, সে যদি রাজনীতিবিদ হয়, তারই উচিত ছিল আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করা।

“সত্যিকারের রাজনীতিবিদ কখনও আইন-আদালতকে ভয় পায় না। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ নয় বলেই তারা ‘আর কখনও রাজনীতি করবে না’ বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছিল।”