মহামারী অস্বীকার করে ওলামা লীগের ‘আইন বহির্ভূত’ বক্তব্য

করোনাভাইরাস যেখানে প্রতিদিন বিশ্বের শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে, অনেক মুসলিমপ্রধান দেশ যেখানে মসজিদ বন্ধ রেখে কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে, সেখানে ওলামা লীগ নামে একটি সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছে, এ ভাইরাস আদৌ ‘ছোঁয়াচে নয়’; বর্তমান পরিস্থিতিকে তারা মহামারীও বলতে রাজি নয়। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2020, 08:40 AM
Updated : 22 June 2020, 03:14 PM

মসজিদে সামাজিক দূরত্বের বিধি মেনে সীমিত পরিসরে জামাত আয়োজনের যে নির্দেশনা ইসলামিক ফাউন্ডেশন দিয়েছে, তাকে ‘কুফুরি মতবাদ’ আখ্যায়িত করা হয়েছে ওলামা লীগের এক মানববন্ধন থেকে।

তাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এ ধরনের অপপ্রচার আইন বহির্ভূত।”

সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধন থেকে ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, “ইসলামিক ফাউন্ডেশন করোনাভাইরাসকে মহামারী বলেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারণ মহামারী হয় একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে সারা বিশ্বে।”

তার দাবি, ঘণ্টায় কমপক্ষে ২০ হাজার লোক মারা গেলে তখন তাকে ‘ইসলামে দৃষ্টিতে’ মহামারী বলা যায়। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জনের মৃত্যু “প্রমাণ করে না যে করোনাভাইরাস মহামারী তৈরি করেছে।”

আবুল হাসান শেখ শরিয়তপুরীর ভাষ্য, সংক্রমণ বা ছোঁয়াচে রোগ বলে বিশ্বাস করা ‘কুফরি ও শিরকি’। একটি মহল সরকারকে ‘ভুল বোঝাচ্ছে’।

ওলামা লীগের সভাপতি মো. আক্তার হোসেন বুখারী মানববন্ধনে বলেন, “কোরবানির ঈদে করোনাভাইরাসের মিথ্যা প্রচারণা শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে। কুরবানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, গরিবের হক যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে।”

দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে আসা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ’ এর নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা বহু আগে বলে দিয়েছি ওলামা লীগের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এদের সঙ্গে আমাদের কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই।”

আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ এমন অপপ্রচার করলে এর দায় তাদের নিতে হবে।

“সৌদি আরবের পবিত্র মদিনা শরিফেও এই মহামারীর সময়ে নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সীমিত পরিসরে নামজ আদায় শুরু হয়েছে। আর আমাদের দেশে কখনও মসজিদ বন্ধ হয়নি। সেখানে সীমিত পরিসরে মুসল্লিরা নামাজ পড়েছেন। স্বাস্থবিধি মেনে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন।

“এদের এই অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য আইনের আওতায় আসে কি না তা দেখতে হবে।”

কভিড-১৯ বাংলাদেশের সংক্রামক ব্যাধির তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা কেউ উপেক্ষা করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এই আইনের অধীনে তাকে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ আছে।

২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা এবং নির্দেশ পালনে অসম্মতির জন্য সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।

আর ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ সংক্রামক রোগ সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ২ মাসের কারাদণ্ড, বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।