সিটি ভোট: ইভিএম বাতিলের দাবি নিয়ে ইসিতে বিএনপি

এতদিন প্রচার-প্রচারণায় দাবি তুললেও এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার না করতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2020, 08:30 AM
Updated : 21 Jan 2020, 08:55 AM

মঙ্গলবার মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা চিঠিটি ইসিতে নিয়ে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল, যার নেতৃত্বে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

বিএনপি ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও শুরু থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে।

সিইসিকে দেওয়া চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব লিখেছেন, “০১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের হাতে এখনও সুযোগ আছে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চেষ্টা করার। 

“সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই উন্মোচিত ইভিএম’র অকার্যকারিতাকে বিবেচনায় নিয়ে ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে প্রচলিত ব্যালট ব্যবস্থাতেই ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। ভোট প্রক্রিয়ায় সরকারি দলের খবরদারি বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। 

“আশা করি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রমাণে আমাদের দাবি পূরণ করে ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও স্বচ্ছ করার ব্যবস্থা নিবেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন। দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।

ইসির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে নতুন করে উপনির্বাচন আয়োজনের দাবিও জানানো হয়।

বৈঠক শেষে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচনে কি ঘটেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ হয়েছে। সেটি নিয়ে আজ কথা বলেছি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে এই নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থা অধিকতর খারাপের দিকে যাচ্ছে। উন্নতি তো দূরের কথা অবনতির দিকে যাচ্ছে, ফলে আস্থাহীনতা বাড়ছে। 

জাসদনেতা মঈনুদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনিবার্চনে আওয়ামী লীগের মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ৮৭ হাজার ৩৪৬ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির আবু সুফিয়ান পান ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট।

এই উপনির্বাচনে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন দাবি করলেও বিএনপিপ্রার্থী বলছেন, মাত্র পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, কেন্দ্র দখলের অভিযোগও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে তুলেছেন তিনি।

চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে সব কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, “১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবগুলোই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রে বাইরের কেউ থাকতে পারবে না, গাড়ি-মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের যত মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। যেখানে ভোট দেয় তা দখল করে নিয়েছে। মৃত মানুষের ভোট, প্রবাসীদের ভোট, জেলে থাকাদের ভোটও দিয়েছে।  ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয় চট্টগ্রামের ভোটে তা প্রমাণিত হয়েছে। 

“চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। যারা যেতে পেরেছে তারা আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছে, ভোটের ব্যালট ইউনিটে ভোটের কাজ তারা সেরে ফেলেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে।”

তিনি বলেন, “কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে দিন। ব্যালটের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন দিন। ইভিএমে ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই। ভারতের চেয়ে ১১ গুণ বেশি টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ।”

কমিশন কি বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তারা বলছে সব ঠিক আছে। ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, এখনও তাই বলছে।”

মঙ্গলবার গাবতলীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণায় হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, “আমাদের উত্তরের প্রার্থী তাবিথের উপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছে। ঢাকার নির্বাচনে তারা রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি।”