কাউন্সিলর পদে বাড়তি ৩৭ জনকে নিয়ে ‘মাথাব্যথা’ বিএনপির

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিতদের বাইরে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া নেতাদের বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।

সুমন মাহমুদ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 02:50 PM
Updated : 18 Jan 2020, 07:47 AM

শুক্রবার দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে কথা বলা এই অবস্থানের কথা জানা গেছে।

আগামী দুই দিনের মধ্যেই সব বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্বাচন থেকে সরানোর পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এরইমধ্যে বিদ্রোহীদের ডেকে বৈঠক শুরু করছেন। শুক্রবার উত্তরের কয়েকজন বিদ্রোহীর সঙ্গে এই কমিটির নেতাদের একটি বৈঠকও হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে আহ্বায়ক এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান সমন্বয়কারী করে উত্তরের কমিটি করেছে বিএনপি। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে আহ্বায়ক ও মির্জা আব্বাসকে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সিটিতে বিএনপির বিদ্রোহীর সংখ্যা ৩৭ জন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে (মোট ৭৫টি ওয়ার্ড) বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১৪ জন এবং উত্তরে (মোট ৫৪টি ওয়ার্ড) বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন ২৩ জন।

বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পেছনেও নানা কারণ রয়েছে। কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন মামলা-মোকদ্দমা মাথায় নিয়ে কাজ করার পরেও দলের সমর্থন না পেয়ে ক্ষোভ থেকে, আবার কেউ কেউ হয়েছেন দল সমর্থিত প্রার্থী কোনো কারণে গ্রেপ্তার হয়ে গেলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে থাকার জন্যে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “আমাদের দল অনেক বৃহৎ রাজনৈতিক দল, অনেক নেতা আছে। আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবেই সিটি করপোরেশনের এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। সেজন্য এটা আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। দলে সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর বাইরে যারা বিদ্রোহী দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের আমরা অনুরোধ করছি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে।”

দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যেও বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন, ধানের শীষের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।

“এই ভোট ধানের শীষের ভোট, ধানের শীষ হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মার্কা, বেগম খালেদা জিয়ার মার্কা। বেগম জিয়া অন্যায়ভাবে কারাগারে। আজকে আপনাদের এই মূল্যবান ভোটে দেশনেত্রীর মুক্তি হতে পারে, এদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে, জনগণ পরিবর্তন চায়। এই ভোটটি অত্যন্ত মূল্যবান।”

বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য দলের পক্ষ থেকে একটা সময়সীমা বেধে দেওয়া হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, “এটা করা হবে যাতে করে তারা (বিদ্রোহী) ঘোষণা দিয়ে দলের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবু নাছের লিটন, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে সুমন ভুঁইয়া, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মোজাম্মেল হক মুক্তা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ হোসেন, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঢালী মামুনুর রশীদ ও মো. সোহেল, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে কবির আহমেদ, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে বাদল রানা, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে শহিদুল হক, ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে খোরশেদ আলম, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ আলম, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে নুরউদ্দিন মিয়া এবং ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে সোনিয়া হোসেন।

এই সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডে বিএনপির কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীই নেই।

৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন ওয়ারি থানার সভাপতি লিয়াকত আলী। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তার আপন ভাই ফরহাদ হোসেন।

লিয়াকত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ৩০ এর বেশি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে ক্ষমতাসীনরা। সব মামলায় বর্তমানে জামিনে আছি। তারপরেও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছি। যদি কোনো কারণে ক্ষমতাসীনরা ষড়যন্ত্র করে আমাকে আটকে দেয় সেই কারণে নিজের সাপোর্ট হিসেবে ভাইকে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখেছি। আমার ভাই দলের বিদ্রোহী নয়।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর একটি ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড আগে ছিল নাসিরাবাদ ইউনিয়ন। এখানে দলের সমর্থন পেয়েছেন আকবর হোসেন। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সোনিয়া হোসেন। সোনিয়ার স্বামী প্রয়াত আবুল হোসেন নাসিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ছাত্রদল নেতা জামাল উদ্দিন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সাব্বির দেওয়ান জনি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বুলবুল আহমেদ মল্লিক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাহাদুল ইসলাম ভুঁইয়া, আমজাদ হোসেন মোল্লা ও হাবিবুর রহমান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম রাব্বানী ও আলমগীর কবির, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শাহ আলম ও সোলায়মান খান দেওয়ান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ আকরাম হোসেন, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ফরিদ মৃধা, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল লতিফ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিম আহমেদ রাজু, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল মেছের, কামাল আহমেদ দুলু, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে হাশেম মিয়া ও শেখ জিয়াউর রহমান বাবু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবেদ আলী, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে হাসিনা মোবারক কাকলী, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ওসমান গনি শাহজাহান, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে আলী হোসেন এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ কামরুল।

নিজ দলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ে চাপে রয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী হেলাল কবির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটার ও সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই বিদ্রোহীরা দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কাদেরকে লাভবান করতে তারা দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করছেন, তা এলাকার ভোটাররা বোঝেন।”