ইভিএমে আপত্তি কেন, ব্যাখ্যা দিলেন ফখরুল

ইভিএম নিয়ে বিএনপির আপত্তি কেন, সংবাদ সম্মেলন করে তা ব্যাখ্যা করলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 05:44 PM
Updated : 5 Jan 2020, 05:44 PM

ইভিএমেরর শুরু থেকে আপত্তি জানিয়ে আসা বিএনপি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে রোববার তাদের আপত্তির কারণ জানায়।

আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোটের পুরোপাই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ইভিএমে ভোটগ্রহণের পক্ষপাতি।

ফখরুল বলেন, সিটি ভোট ইভিএমে গ্রহণ ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তনের যে কোনো নির্বাচন ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটাধিকার হত্যার এক নিঃশব্দ প্রকল্প বাস্তবায়নের দুরভিসন্ধি মাত্র’।

ইভিএমে বিরোধিতার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রোগ্রামিংয়ে ভ্রান্তি, যান্ত্রিক ক্রুটি, বিদ্বেষাত্মক টেম্পারিং বা কারসাজি, কস্পিউটারভিত্তিক ভোট প্রদান যন্ত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও সম্ভাবনা এবং নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তদের বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল পাইয়ে দেয়ার সুযোগ ইত্যাদিসহ নানা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই নির্বাচনে ইভিএমের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।

“আপনারাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, গত ২০১৭ সালের নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল স্বচ্ছ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে একটি সংলাপে অংশ নিয়েছিল যার মধ্যে ২৩টি দল একাদশ সংসদ নির্বাচন ইভিএম নিয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছিল। বিএনপিসহ ১২ দল সুস্পষ্টভাবে এই মেশিন ব্যবহারের বিপক্ষে মত প্রদান করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ৭টি দল বোধগম্য কারণে এই মেশিনের পক্ষে মত দেয়।”

ফখরুল বলেন, “সবচেয়ে সফেসটিকেটেড মেশিনেও কারচুপির সম্ভাবনা আছে। আপনি রিমোট কনট্রোলে ভোট কারচুপি করতে পারেন। আমেরিকান নির্বাচনে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “আমেরিকাতে একসময়ে এটা হয়েছিল। গত বছর আমেরিকার সবচেয়ে বড় যে কোম্পানি, যারা এই মেশিন (ইভিএম) তৈরি করে এবং যারা বিগত বছরগুলোতে ভোটের জন্য এসব মেশিন প্রমোট করেছে, গতবছর তারা নিজেরাই একটা বক্তব্য দিয়েছে। তারা নিজেরাই বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অফিসিয়ালি ডিক্লেয়ার্ড করেছে যে, আমরা এই মেশিন আর বিক্রি করব না, এই মেশিনের উপর কারও আস্থা নাই।”

ইভিএম নিয়ে সন্দেহ থাকলে ভোটের আগেই যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “এটাতে ভোট কারচুপির বহু সুযোগ রয়েছে, তা আমরা বলেছি। সেই মেশিন যেটাই হোক। এরপর কমিশনের ওই সদস্যের বক্তব্য ধোপে টিকে না।”

তিনি বলেন, “নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডারদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সব কয়েক আসনে ইভিএম ব্যবহারের একতরফা সিদ্ধান্ত আসন্ন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নিঃশব্দ ডিজিটাল কারচুপির এক মহাষড়যন্ত্র বলে আমরা মনে করি।”

তারপরও ইভিএমে ভোট হলে কী করবেন- প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা পুরো ব্যবস্থাটা বাতিল করার জন্য বলেছি। আমরা দেখব, এতে নির্বাচন কিভাবে রি-অ্যাক্ট করছে। সেটা দেখার পরে তারপরে আমরা বাকি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচন এদেশের মানুষসহ সমগ্র বিশ্ব অবলোকন করেছে।

“বিএনপি বিশ্বাস করে, যারা জনগণকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিস্ট শক্তি হিসেবে এদেশের মানুষের অধিকার পদদলিত করতে সহায়ক হিসেবে নগ্ন ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে, সেরকম অস্বচ্ছ, অবিশ্বাসী অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইভিএমের মতো নিঃশব্দ নির্বাচনী কারচুপি পদ্ধতি কিছুতেই কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারে না।”

সেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা গভীরভাবে হতাশা ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি, এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকেও ব্যবহার করার ঘৃণ্য অপতৎপরতা চলছে। যার অংশ হিসেবে ইভিএম প্রকল্পে সেনা সদস্য নিয়োগের প্রচার চালিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার ও বংশবদ নির্বাচন কমিশন এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

“আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি রক্ষায় সদা নিয়োজিত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের শেষ ভরসারস্থল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে সকল বির্তকের বাইরে রাখা সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আপনাদের মাধ্যমে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে যে কোনো ধরনের বির্তকিত কাজের বাইরে রাখার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।