গণতন্ত্র ‘উদ্ধারে’ নতুন মঞ্চ মান্নার

‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’ নামে একটি নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে এবার সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 02:39 PM
Updated : 30 Dec 2019, 02:48 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বার্ষিকীতে ‘ভোট ডাকাতি’র প্রতিবাদে সোমবার ঢাকায় এক সমাবেশে নতুন প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা।

‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’র সমাবেশের মঞ্চে মান্নার সঙ্গে ছিলেন জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নুর হোসাইন কাসেমী।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পাশাপাশি ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খোন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের শাহ মো. আবু জাফর, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান বক্তব্য রাখেন।

‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’ মৎস্য ভবনের সামনে সড়কে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’র এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে নেতা-কর্মীদের হাতে জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা ছাড়া সরকারের পদত্যাগের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন ফেস্টুন ছিল।

সমাবেশের সভাপতি মান্না বলেন, “আজকে এখানে একটা সংগঠনের কথা বলেছি সেটা হচ্ছে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন’। এটা নাগরিক ঐক্যের না, এটা বিএনপির না, এটা কোনো দলের না। এটা সবার।

“এজন্য শহীদুল আলমের মতো আন্তর্জাতিক ফটো সাংবাদিক এসেছেন। টক শোতে সবাই বসে থাকে আসিফ নজরুলের কথা শুনতে, উনি এসেছেন। আমি বক্তৃতা করতে করতে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক সিআর আবরার, উনি নিচে দাঁড়িয়ে আছেন।

“উনারা এসেছেন কেন? মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সবাইকে মিলেই এই গণতন্ত্র উদ্ধার আন্দোলন জোরদার করতে হবে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়েছিলেন রব-মান্নারা। ওই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে এই জোট।

এরপর গণতন্ত্র ‘ফিরিয়ে আনতে’ জোরাল আন্দোলনের কথা জোটের পক্ষ থেকে বলা হলেও তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। এর মধ্যে সংসদে যোগদান প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টে দেখা দেয় ভাঙন।

নতুন সংগঠনের ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে জোরাল আন্দোলনের কথাই বলেন মান্না।

“পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করা শুরু করেন। যত তাড়াতাড়ি করব, তত তাড়াতাড়ি এই সরকারকে কার্ড দেখাব। আগে হলুদ কার্ড দেখাই, পরে আরেকটা হলুদ কার্ড দেব।”

সমাবেশের কর্মীরা ‘লাল কার্ড’ বলে আওয়াজ তুললে তিনি বলেন, “কার্ড যদি দিই, তাহলে ওই কার্ড কার্যকরি করতে হবে। অতএব একটু হিসাব করেই নামছি।”

মান্না বলেন, “তৈরি থাকেন, যে কোনো সময়ে এই সরকারের পতনের জন্য সর্বাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। আজ থেকেই লড়াই শুরু। এই লড়াই চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত, বিজয় অর্জিত না হচ্ছে যতক্ষন পর্যন্ত। আজকে সমাবেশ করছি। আমরা আবার আসব শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আছি, যাব না।”

জেএসডির সভাপতি রব সরকারের উদ্দেশে বলেন, “একটাই কথা বলতে চাই, ভদ্রভাবে যাবেন, না অভদ্রভাবে যাবেন-এটা ডিসাইড করেন। আপনাকে যেতে হবে। আপনার থাকার আর কোনো সুযোগ নাই। কীভাবে যাবেন, আপনি সিদ্ধান্ত নিন।”

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, “আপনারা অনেক মানুষের ভোট চুরি করেছেন। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে যে, তুমি কি স্বাধীনতা বিরোধী? নিশ্চয়ই না। এই সরকারকে প্রশ্ন করলে যদি স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যায়, তাহলে দেশের ১৬ কোটি মানুষই স্বাধীনতাবিরোধী হয়ে যাবে।”

তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই। কে সরকারে আসবে, আমরা বিষয় নয়। সে নির্বাচিত হয়ে আসবে, সেটা আমার দাবি। যে বাংলাদেশের জন্য এতগুলো মানুষ সংগ্রাম করেছে, ত্যাগ করেছে সেই বাংলাদেশে আমি ফিরে যেতে চাই। আমি মনে করি, আমরা প্রত্যেকে যদি আজকে যেমন নেমেছে, আমরা যদি রাজপথে নামি, আমাদের বিশ্বাসের পেছনে সত্যিকার অর্থে দাঁড়াতে পারি- সেই বাংলাদেশ আমরা ফিরে পাব।”

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় নিজের গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শহিদুল আলম বলেন, “আমার প্রতি যে অত্যাচার হয়েছিল, যে নির্যাতন হয়েছিল, যেটা নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আমি যে কথাগুলো বলেছিলাম, আপনারা প্রত্যেকে সেই কথাগুলো বলবেন।

“বাংলাদেশে প্রত্যেকটা নাগরিক জানে, আমাদের দেশে কী হচ্ছে, কীভাবে চলছে এবং সেগুলো বলতে যদি হাজতে যেতে হয়, সেই জিনিস বললেই যদি আপনি সরকারবিরোধী হন, সেই জিনিস বললেই যদি আপনি দেশের বিরোধী হন, তাহলে আমি এই দেশ বিশ্বাস করি না। আমি যে দেশে বিশ্বাস করি, সেখানে আপনি-আমি যা ইচ্ছা স্বাধীনভাবে বলব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা প্রত্যেকে জানি, এক বছর আগে এই দিন বাংলাদেশে কী হয়েছে। ১৬ কোটি লোককে কার্যত বন্দি করে এরকম নিষ্ঠুরভাবে নির্মমভাবে ভোটচুরির মহাউৎসব আগে কখনও বাংলাদেশের মানুষ কখনো দেখে নাই।

“শুধু যে গণতন্ত্রের সমাধি হয়েছে সেটা না, আমাদের বাক স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা সমস্ত কিছু হরণ করা হয়েছে। আমি আশা করি, বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে সংগ্রাম সেটা অব্যাহত থাকবে।”

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “একটি দফা জনগনের সেই দফা এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে আমরা ঘরে ফিরবে না। এই সরকারের পদত্যাগ হলেই আমরা গণতন্ত্র ফিরে পাব, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর নামে মামলা প্রত্যাহার হবে।”

খোন্দকার মাহবুব হোসেন অভিযোগ করেন, তাদের সমর্থক আইনজীবীরা এই সমাবেশে যাতে যোগ দিতে না পারে সেজন্য ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে।

সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনাকে বলছি, ক্ষমতা চিরস্থায়ী না। আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে। আমরা বহুবার দেখেছি বহু শক্তিশালী নেতা দেখেছি, আমরা স্বৈরাশাসক দেখেছি, আমরা সামরিক শাসন দেখেছি। কেউ কিন্তু টিকতে পারে নাই।”

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরের উপর হামলার ঘটনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি মান্না বলেন, “এখন ডাকসুর ভিপির নামে মামলা দেওয়া হচ্ছে কেন? সিসিটিভির ফুটেজ নাই, দায়িত্ব কার  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি… উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন না কেন? তাকে রিমান্ডে নেন না কেন? ভিসিকে রিমান্ডে নিতে বলা অবশ্য ভালো না। রিমান্ডে নিয়েন না, জিজ্ঞাসা করেন, উনি কী জানেন?”