এভাবে বিভিন্ন সময়ে অনেককে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিবির সন্দেহে পেটানো হয়েছে দাবি করে খেদ প্রকাশ করেছেন তিনি। শিবির পেটানোর বিরোধিতা করে কেন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তা নিয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের জবাবদিহিও করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগ, ছাত্র দল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
ছাত্র শিবিরের হামলায় এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেমন প্রাণ হারিয়েছেন, তেমনি সংগঠনগুলোর প্রতিরোধের মুখেও পড়েছে তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আগে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্র শিবির নেতাকর্মীরা।
আইনের এই অধ্যাপক প্রশ্ন করেন, “বাংলাদেশে কি কোনো আইন আছে যে, জামায়াত করলে, শিবির করলে তাকে পেটানো যাবে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে, তাকে মেরে ফেলা যাবে, তাকে হল থেকে বের করে দেয়া যাবে? আমাদের সংবিধানে এ রকম কি আইন আছে? আপনারা এত আইনজীবী আছেন, আপনারা কেন আদালতে বিচারকের কাছে গিয়ে বললেন না, শিবির সন্দেহ কি কাউকে পিটিয়ে মারতে পারবে? যদি না থাকে এটা সংবিধান লংঘন কেন হবে না?”
আসিফ নজরুল বলেন, “বাংলাদেশের আইনে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেওয়া হয় নাই, বাংলাদেশের আইনে কারও মোবাইল-ল্যাপটপ চেক করার ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয় নাই, কাউকে শিবির সন্দেহে পেটানোর ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেওয়া হয় নাই, হল থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়নি।”
জামায়াত-শিবির প্রীতি থেকে এসব কথা বলছেন না বলেও দাবি করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
এক ফেইসবুক পোস্টের জের ধরে গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িত কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তিগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে দেওয়া ওই পোস্টে ভারতের বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন আবরার। পাশাপাশি ভারতকে ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরায় সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার চুক্তিকে ইঙ্গিত করে সমালোচনা করেছিলেন তিনি।
তিনি লিখেছিলেন, “কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব।”
প্রধানমন্ত্রীর সফরে আমদানি করা এলপিজি ভারতে রপ্তানির চুক্তি হলেও আবরার ওই পোস্টে বাংলাদেশের গ্যাস দেওয়া হবে বলে লিখেছিলেন: “কয়েক বছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তরভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।”
এ নিয়ে তাকে নির্যাতন ও হত্যার কারণ হিসেবে তার ‘ভারতবিরোধিতা’ মূল ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন আসিফ নজরুল।
“এটা স্পষ্ট যে আবরার মারা গেছে দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য, আবরার মারা গেছে ভারতের বিপক্ষে কথা বলার জন্য। এখন কোনো খুনির পক্ষে যত বড় শয়তানই হোক না কেন, তার তো এভাবে একজনকে মেরে ফেলা সম্ভব না, কাউকে মেরে ফেললাম- কেন মেরেছে?
“ভারতের বিপক্ষে কথা বলেছে দেখে মেরে ফেলেছি বা দেশের পক্ষে কথা বলেছে বলে মেরে ফেলেছি-এটা তো সম্ভব না। সেজন্য তাদের প্রয়োজন হয় একটা ট্যাগ লাগানো। যাকে মারবে বা হত্যা করবে তাকে একটা ট্যাগ লাগাবে। সেই ট্যাগটা কি? জামায়াত-শিবির।”