আবরার হত্যা: বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান ড. কামাল

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন ড. কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 11:27 AM
Updated : 10 Oct 2019, 01:10 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি এ দাবি তুলেন।

ড. কামাল বলেন, আবরারকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা স্বাধীনতার আগে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা মনে করিয়ে দেয়। যারা রুগ্ন তারাই এসব করতে পারে।

তিনি বলেন, মতপ্রকাশের জন্য এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হাজার বছরের সভ্যতা, ঐতিহ্য, স্বাধীনতার অর্জন ও সংবিধানের ওপর আক্রমণ। সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, যেখানে বিচার বিভাগের ব্যক্তিরা থাকুন, প্রয়োজন হলে অন্যরাও থাকুন। সাবেক আইজিও থাকতে পারেন।

তিনি বলেন, গতানুগতিক তদন্ত কমিটি নয়, সত্যিকার অর্থে স্বাধীন ব্যক্তি, নীতিবান ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক। এ কমিটি গভীরে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যাগুলো উঘাটন করবে।

তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত রোববার রাতে তাকে সেখান থেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ কয়েকজন মিলে আবরারকে লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে বলে ইতোমধ্যে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের নিজস্ব তদন্তেও। তবে ছাত্রলীগ দাবি করেছে, ওই সময় তারা ‘মাতাল’ ছিল।

আবরারের খুনিদের বিষয়ে ড. কামাল বলেন, “১০-১২টা ছেলে, এদেরকে কী বলব আমি? এরা জানোয়ার। আমাদের ছেলেদেরকে আমরা পশুতে পরিণত করছি- এটা ভয়াবহ।

“আমার সঙ্গে একমত না হলে কাউকে পিটিয়ে মারতে হবে- এটা ষোলো আনা সংবিধানবিরোধী, এটা রাষ্ট্রবিরোধী, দেশদ্রোহিতা। আমি সেজন্য মনে করি, এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।”

এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি আমরা কোনোদিন চাইনি। ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তিক হলে সেটা ছাত্র রাজনীতি থাকে না। তার পরিণতি আমরা আজকে দেখতে পাচ্ছি।

“দেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে বলতে হবে- এই ধরনের সন্ত্রাস বন্ধ হতে হবে। এরকম সন্ত্রাস আমরা মেনে নিতে পারি না।”

তিনি বলেন, সংবিধান মেনে দেশ শাসন করতে হবে। এটা মানা হচ্ছে না বলেই আইনের শাসন নেই। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। এজন্য জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলায় মওলানা আকরাম খাঁ হলে গণফোরামের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

অন্যদের মধ্যে আরেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোকাব্বির খান, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, মহসিন রশিদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোশতাক হোসেন, আমিন আহমেদ আফসারি, লতিফুল বারী হামীম ও ফরিদা বেগম উপস্থিত ছিলেন।