তাদের গ্রেপ্তার করতে ‘অনেক কষ্ট করতে’ হয়েছে মন্তব্য করে র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, “আত্মগোপনে থাকার জন্য সম্রাট বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিল। মূলত ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি।”
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের ওই বাড়ি থেকে শনিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি সম্রাট ও সহ-সভাপতি আরমান।
ওই বাড়ির মালিক মনির হোসেন স্টার লাইন পরিবহনের একজন পরিচালক, তিনি সম্রাটের দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই। সম্রাট আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতা হলেও মনির জামাত সমর্থক হিসেবে পরিচিত বলে আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, মনিরের স্ত্রীর ভাই হাজী আলাউদ্দিন স্টার লাইন পরিবহনের মালিক এবং ফেনী পৌরসভার মেয়র। আলাউদ্দিন এক সময় জাতীয় পার্টি করলেও এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন।
“ওই বাসায় মনির বা তার পরিবারের কেউ থাকত না। সেখানে যে সম্রাট বা আরমান আছে, এটাও আমরা জানতাম না। তবে ফেনী পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিনকে গত ২/৩দিন ঘনঘন ওই বাড়িতে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।”
আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মনিরের বাসায় সম্রাটের অবস্থান করার খবর তারও ‘আগে জানা ছিল না’।
“শনিবার র্যাবের অভিযানের খবর জানার পর রাত ১১টার দিকে মনিরকে ফোন করেছিলাম। সম্রাট কেন তার বাসায়, তা জানতে চেয়েছিলাম।
এক প্রশ্নের জবাবে আলাউদ্দিন বলেন, ওই বাসা অধিকাংশ সময় ফাঁকাই থাকে। মনিরের পরিবার থাকে ঢাকায়।
সম্রাট বা আরমানের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই দাবি করে আলাউদ্দীন বলেন, “গত বৃহস্পতিবার আমি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছি। আমি তাদের বিষয়ে কিছু জানি না।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন সম্রাট ও আরমান।
সেদিন র্যাবের অভিযানের সময় মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্রের ভেতরে সম্রাটের বিশাল ছবি দেখা যায়। ওই ক্লাবের ক্যাসিনো তিনিই চালাতেন এবং মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় অন্য ক্যাসিনোগুলো থেকেও প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে চাঁদা তার কাছে যেত বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।
সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা আরমানও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনোর কারবারে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঢাকাই সিনেমাতেও টাকা খাটাচ্ছিলেন।
তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেন র্যাব কর্মকর্তারা। পরে তাদের নিয়ে আসা হয় ঢাকায়। কাকরাইলে সম্রাটের অফিস, শান্তিনগর ও মহাখালীতে তার দুই বাসায় এবং মিরপুর ২ নম্বরে আরমানে বাসায় রোববার দুপুর থেকে শুরু হয় র্যাবের অভিযান।
র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দুপুরে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ক্যাসিনোতে অভিযান শুরুর দুই দিনের মধ্যে সম্রাট আত্মগোপনে চলে যায়। ক্যাসিনোর সাথে আরও যারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে র্যাব কাজ করছে। যেই এর সাথে জড়িত হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
[বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কুমিল্লা ও ফেনী প্রতিনিধি তথ্য দিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।]