এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের চান তৃণমূলের বামপন্থিরা

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ধরে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার উপর জোর দিতে বলেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধি সভার বক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2019, 08:11 PM
Updated : 19 July 2019, 08:11 PM

সিপিবি ও বাসদের নেতৃত্বে জোট গঠনের এক বছরের মাথায় শুক্রবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে 'আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন রুখে দাঁড়ান, জনগণের সংগ্রামী ঐক্য জোরদার করুন' ব্যানারে প্রথম প্রতিনিধি সভায় স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা কথা বলেন।

নাটোর জেলা বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আনসার আলী দুলাল বলেন, “বাম জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। জোটের প্রতিটি দল থেকে গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এতে করে হাজার হাজার মানুষ সম্পৃক্ত হবে, জোটের শক্তি-সামর্থ্য বাড়বে।”

রংপুর জেলা বাম জোটের সমন্বয়ক আবদুল কুদ্দুস বলেন, “কোনো কোনো ইস্যু ধরে বছরব্যাপী বাস্তবায়নযোগ্য আন্দোলন দরকার। সফল আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা সম্ভব হবে। এই জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সফর করে সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়া জরুরি।”

জোটের রাজশাহী জেলা সমন্বয়ক ও সিপিবি নেতা রাগীব আহসান মুন্না বলেন, “বাম জোটকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জোটকে শক্তিশালী করতে জনআস্থার বিকল্প নাই।”

সিরাজগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নব কুমার বলেন, “আমরা জনগণের ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলছি। কিন্তু বাম জোট নিজেদের কতটুকু ঐক্য গড়ে তুলতে পেরেছে তা নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।”

বাম জোটের ঐক্য গড়ে তোলা এবং কিছু ‘ইস্যু টার্গেট’ করে জনগণকে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত করতে হলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ করতে প্রস্তাব করেন তিনি।

নব কুমারের মতো একই কথা বলেন জোটের ময়মনসিংহ জেলা সমন্বয়ক আজহারুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমাদের জেলায় ছয়টি দলের কার্যক্রম আছে। এর মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন দল দুটি অনেকটা নিস্ক্রিয়। তারপরও গত ৭ জুলাইয়ের হরতাল আমরা সফলভাবে পালন করেছি।”

গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মসূচি লাগাতার করার দাবি জানিয়ে উপজেলা-জেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ দেওয়ার আহ্বান জানান আহজারুল।

জোটের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয়ক অশোক সাহা বলেন, “বিএনপি একটি দক্ষিণপন্থি দল, আমাদের কোনো কর্মসূচিতে তাদের সমর্থন দেওয়া সুখকর নয়। আওয়ামী লীগ জোট এবং বিএনপি জোটের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক জোটকে বিকল্প শক্তিশালী জোট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”

কিশোরগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম শাহজাহান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করে একটি দল লুটপাট কায়েম করেছে। এখন বাম জোটকে শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা না বলে ৪৮ বছরের এই দেশের জনগণের এখনকার সমস্যার কথা বলতে হবে। এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করতে হবে।”

বাম জোটকে আরও দৃঢ়তার সাথে শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জোটের যশোর জেলা সমন্বয়ক তসলিমুর রহমান বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন তাড়ানোর জন্য অন্য কোনো ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে স্থান দিব না।”

সভায় একাধিক বক্তা বন্যা দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দুর্গতদের সহায়তা বৃদ্ধি করতে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বন্যার পর নদী ভাঙনের আশঙ্কা থাকে, নদী ভাঙন রোধে আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাম জোটের নেতা ও সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নয়া উদারবাদ ও মুক্তবাজারের নীতিতে বর্তমান সরকার দেশ চালাচ্ছে। তার ফলে দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।”

তিনি বলেন, “মন্দের ভালো তত্ত্ব নয়, মন্দের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলে ভালোকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উন্নয়নের শ্লোগানের আড়ালে লুণ্ঠনের তীব্রতা বাড়াচ্ছে সরকার। এর বিরুদ্ধে বামপন্থিরাই একমাত্র বিকল্প।”

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “বুর্জোয়ারা গত ৪৮ বছরে দুইটা প্রেসিডেন্ট হত্যা, পাঁচবার সামরিক শাসন, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী খুন করেছে। বেসামরিক লেবাসে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে।”

এই অবস্থার অবসানে মূল শত্রু ফ্যাসিবাদকে মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু সভার সভাপতিত্ব করেন।

অন্যদের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়ক আবু হাসান রুবেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা লিয়াকত আলীসহ জোটের অন্যান্য দলের নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।