কঠোর কর্মসূচি দিন: বরিশালের সমাবেশে আহ্বান ফখরুলকে

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বিএনপি মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির বরিশালের নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2019, 03:06 PM
Updated : 18 July 2019, 03:11 PM

দেড় বছর ধরে কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় শহরগুলোতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বরিশালে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হল।

গত বছরের শেষে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এটাই বিএনপির প্রথম বড় কর্মসূচি। ওই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি।

বরিশাল নগরীর হেমায়েতউদ্দিন ঈদগাহ মাঠের এই জনসভায় এই জেলাসহ ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতা-কর্মীরা খালেদার মুক্তির দাবিতে স্লোগানে মুখর ছিল পুরোটি সময়।

বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার জনসভায় বলেন, “আমরা দেশনেত্রীর মুক্তি চাই। তার আন্দোলনে বরিশালবাসী এক।

“আমরা আজকে মহাসচিবের কাছে দাবি করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশনেত্রীর মুক্তি যদি না হয়, তাহলে কঠিন কর্মসূচি দিন। আমরা প্রস্তুত আছি।”

বরগুনার নেতা নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “শুধু মানববন্ধন করে দেশনেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। তার মুক্তি ছাড়া কোনো আন্দোলন হবে না। আমরা হরতাল চাই।”

পিরোজপুরের নেতা আলমগীর হোসেন বলেন, “মাননীয় মহাসচিব আপনি কর্মসূচি দিন, আমরা কথা দিচ্ছি কর্মসূচি সফল করব।”

কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও ভোলার সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এসব মিছিল-মিটিংয়ে, মানববন্ধনে দেশনেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হলে আমাদেরকে ঢাকা শহরে একদিন যেতে হবে।

“ঢাকা শহরের রাজপথে বেশি না, এক লাখ লোক আমরা বসি, শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকি, আমাদের পক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগ দেবে। আসুন, এজন্য আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হই।”

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “বরিশাল একটি সংগ্রামমুখর বিভাগ, যারা হারতে জানে না। আজকে এখান থেকে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। তা নাহলে বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে যে আন্দোলনের ঘোষণা আসবে, বর্তমান সরকার আর পালাবার পথ পাবে না।”

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর সবগুলোকে মামলা হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা। আমরা ৩৫টি মামলায় জামিন নিয়েছি। এখন দুটি মামলায় জামিন বাকি, আমরা আইনি লড়াই করছি।”

গত সংসদ নির্বাচনে বরিশাল বিভাগে বিএনপির জামানত টিকিয়ে রাখা একমাত্র প্রার্থী জয়নাল বলেন, “একদিকে আইনি লড়াই আরেক দিকে রাজনৈতিক সংগ্রাম- দুইয়ের মিলনে আমরা ইনশাল্লাহ বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব।”

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে বরিশালের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, এত প্রতিকূলতার মধ্যে আপনারা এখানে এসেছেন। আজকে বরিশাল থেকে আন্দোলনের সূচনা হল।”

সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “কাল বিলম্ব না করে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। তাকে যদি মুক্তি না দেন, আপনাদেরও রক্ষা হবে না।”

বিএনপির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ কি রক্ষা করে দেবে? আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন কি অন্য কেউ করবে? আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশের ফিরিয়ে আনার আন্দোলন কি অন্য কেউ করবে?”

এই আন্দোলনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব নিতে দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একটা বাজেট দিয়েছে ট্যাক্স, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো, গ্যাসের দাম বাড়ানো। পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকা, প্রত্যেকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে।

“খবরের কাগজ খুললে ধর্ষণ আর ধর্ষণ ছাড়া কোনো খবর নাই, শুধু হত্যা আর হত্যা। আদালতও হত্যা থেকে বাদ যাচ্ছে না। মেগা প্রজেক্টের নামে, মেগা উন্নয়নের নামে তারা নিজেদের পকেট বোঝাই করছে। মানুষের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।”

প্রয়াত এইচ এম এরশাদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “আমরা এরশাদ সাহেবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছি, একটা রাজনৈতিক দলের সভাপতির মৃত্যুতে আমরা শোক প্রকাশ করেছি।

“কিন্তু এটা সত্য যে, এরশাদ সরকারের আমলেই এদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, এটা সত্য যে, তার সরকারের আমলেই আমাদের বহু মানুষ, ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে আপস করে, তাদের সঙ্গে জোট করে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে।

“আজকে তাকে(এরশাদ) রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। আর যিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করলেন, ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি থাকলেন, তাকে আজকে কারাগারের অন্ধকারে অন্তরীণ করে রাখা হয়।”

বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া ও জেলা সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, বিলকিস জাহান শিরিন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আকন কুদ্দুছুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, হাফিজ ইব্রাহিম, মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ, আবুল হোসেন খান, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, হাসান মামুন, হায়দার আলী লেলিন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নুরুল ইসলাম নয়ন, মোস্তাফিজুর রহমান, এলিজা জামান।

বরিশালের এবাদুর হক চাঁন, ভোলার গোলাম নবী আলমগীর, ঝালকাঠির মোস্তফা কামাল মন্টু, পটুয়াখালীর অহিদ সারোয়ার কালাম, পিরোজপুরের আলমগীর হোসেন, বরগুনার নুরুল ইসলাম মোল্লা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

বরিশালের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য ইলেন ভুট্টো, ফিরোজ উজ জামান, বাহাউদ্দিন বাহার, মেহেদি হাসান তালুকদার, রুহুল আমিন দুলাল, শায়রুল কবির খান সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।