আজ হোক কাল হোক তাকে দেশে আনা হবে: তারেককে নিয়ে হাসিনা

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্রিটেনের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ হোক কাল হোক তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2019, 04:38 PM
Updated : 9 June 2019, 04:40 PM

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং মুদ্রা পাচারের এক মামলায় দণ্ডিত। দেশে ফিরলে তাকে যাবজ্জীবন সাজা খাটতে হবে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার তারেক পরের বছর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি নিয়ে লন্ডনে যান। তারপর থেকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সেখানেই আছেন তিনি।

গত বছর দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর লন্ডনে বসেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপি পরিচালনা করছেন তারেক রহমান।

তাকে দেশে ফিরিয়ে দণ্ড কার্যকরে উদ্যোগ নেওয়ার কথা সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছেন।

সম্প্রতি তিন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তরে তার কাছে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চান একজন সাংবাদিক।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই নাম নিতেও তো ঘৃণা লাগে। আমাদের অনেকেরই দরদ উথলে ওঠে। কিন্তু আপনারা ভুলে যান কিভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা? আমি বেঁচে গেছি, আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছেন। কিভাবে তারা ক্ষমতায় থাকতে এতোগুলি মানুষের জীবন নিল!

“একবার না, বার বার এভাবে তারা হামলা চালিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। হত্যাকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাতকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি- এদের জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখলে এদেশে অপরাধীর বিচার হবে কিভাবে?”

তারেক রহমান

তারেকের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা সেখানে এতবেশি টাকা পয়সা বানিয়ে ফেলেছে যে, সেখানে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। আর সেখানে গেলেই তো একটা সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।

“আজ হোক, কাল হোক তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা হবে।”

মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারত, চীন ও জাপানের মনোভাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।

শেখ হাসিনা বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা কিন্তু আলাদাভাবে ভারত, চীন, জাপানের সাথে কথা বলেছি। তারা কিন্তু প্রত্যেকে এটা মেনে নেন যে, হ্যাঁ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। এটা কিন্তু তারা মেনে নেন।

“সাথে সাথে তারা এটাও বলেন, সবাই যদি এদের (মিয়ানমার) বিরুদ্ধে লাগি তাহলে এদের মানাবে কে? এটাও একটা ব্যাপার আছে। সেদিক দিয়ে আমরা জোর চেষ্টা করছি।”

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বা বাংলাদেশের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেই বাধা মনে করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সমস্যা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি-এই যে বিভিন্ন সংস্থাগুলো আছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা এদের ভলন্টারি সার্ভিস দিতে আসে বা যারা কাজ করে এরা কোনো দিনই চায় না কোনো রিফিউজি তাদের দেশে ফিরে যাক। এখানেই সমস্যাটা হয়।”

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যেই চুক্তি করলাম, তালিকা করলাম তারপর হঠাৎ তারা আন্দোলন করল, তারা যাবে না। এ আন্দোলনের উসকানি তাহলে কারা দিল?

“তাদের সব সময় একটা ভয় যে, ওখানে আবার ফিরে গেলে তাদের উপর অত্যাচার হবে। কিন্তু ওখানেও তো কিছু রাখাইন লোকজন আছে। আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন। তিনি গিয়ে সমস্ত জায়গাটা ঘুরে দেখে এসেছেন।

“কিন্তু এই সংস্থাগুলো মূলত এরাই কখনও চায় না, এরা যাক। কারণ তাদের ধারণা বিশাল অংকের টাকা পয়সা আসে, তারপরে অনেকের চাকরি-বাকরি যা আছে থাকবে না।”

কয়েকটি দেশ এখনও মিয়ানমারের পক্ষ নিলেও তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“মুশকিলটা হয়েছে মিয়ানমারকে নিয়ে। তারা কিছুতেই এদেরকে নিতে চায় না। আমরা এদের নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”