ইলিয়াসের মেয়ে এখনও বাবার অপেক্ষায়: ফখরুল

বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর মেয়ে এখনও তার বাবার ফেরার অপেক্ষা করে আছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2019, 01:11 PM
Updated : 17 April 2019, 03:42 PM

বুধবার কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে জিয়া শিশু একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। তাকে সরকার 'গুম' করেছে বলে অভিযোগ করে আসছেন বিএনপি নেতারা।

ফখরুল বলেন, “আমাদের একজন সহকর্মী, যিনি জনগণের প্রতিনিধি ছিলেন; যিনি নির্বাচিত হয়েছেন বার বার; ইলিয়াস আলী এমপি ছিলেন, আজকের এই দিনে সাত বছর আগে তিনি গুম হয়ে গেছেন, নিখোঁজ হয়ে গেছেন।”

ইলিয়াস যখন নিখোঁজ হন, তার তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাইয়ারা নাওয়ালের বয়স সে সময় ছয় বছর ছিল জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমি এখনো সেই দৃশ্য ভুলতে পারি না। আমি তার বাসায় গিয়েছি। দেখেছি সেই মেয়েটি দরজার দিকে তাকিয়ে আছে- তার বাবা হয়ত এখনই আসবে।

“আজকে মেয়েটির বয়স বেড়েছে। ছয়-সাত থেকে তের হয়েছে। এখনো সে দরজার দিতে তাকিয়ে থাকে- এই বুঝি তার বাবা ফিরল। কিন্তু ফেরে না।”

‘সুন্দর-সমৃদ্ধ’ বাংলাদেশ নির্মাণে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন,  “আমরা কেন এই হিংসা, এই প্রতিহিংসা, এই বিদ্রুপ, এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে নেমে পড়েছি? কেন আমাদের রাফিকে (নুসরাত জাহান রাফি) এভাবে নির্যাতিত হয়ে মরতে হয়? কেন?

“আমি জানি না। এর উত্তর আমাদের রাজনীতিবিদদেরই দেওয়ার কথা।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমরা ব্যর্থ হয়েছি সেই ধরনের একটা সুন্দর বাংলাদেশ দিতে। ব্যর্থ হয়েছি তোমাদের নিরাপত্তা দিতে।

‘‘তারপরেও আমি স্বপ্ন দেখি; অবশ্যই এই বাংলাদেশ একটা সুন্দর-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত হবে। আমি স্বপ্ন দেখি- এই শিশুরা নির্ভয়ে বিচরণ করবে, কোথাও তাদের প্রতি আঘাত আসবে না, আমাদের মেয়েদেরকে পুড়িয়ে মারা হবে না- এই স্বপ্নগুলো আমরা দেখি।”

স্মৃতি রোমন্থন করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির জন্য ভালোবাসা, আমাদের শিল্পকে ভালোবাসা, একই সঙ্গে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়।… একটা নতুন নাটক করে বেরোলে মনে হয় যেন বিরাট একটা এচিভমেন্ট হয়ে গেলো। এই জিনিসগুলো ছিল, তখন আমাদের মধ্যেও ছিল।”

উপস্থিত শিশুদের মাঝে ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন’ দেখতে পান মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই ছোট ছোট বাচ্চারা, ওই যে দেখুন, ওই কোনে একদম ছোট্ট, খুব সুন্দর সেজে এসেছে। নাচবে সম্ভবত। ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে- কী করে তার মুদ্রাটা ঠিক করবে। এখানে যাতে তার পারফরমেন্স ভালো হয়।

“এই বিষয়গুলো আমাকে খুব আলোড়িত করে। ওই শিশুটির মধ্যে যে স্বপ্ন- একজন ভালো শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন, সেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, সেই স্বপ্নই তো তাকে তাড়িত করবে একটা ভালো সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে। এর দিকে আমাদের সকলের যাওয়া উচিত।” 

অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে বলেন,  “মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এমন একটি পরিবারও ছিল না যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এমন একটা পরিবার ছিল না যাদের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ অবদানে আমাদের লক্ষ্য সমৃদ্ধ না হয়েছে।

“নতুন করে আবার ভাবতে হবে, আজকে যে বাংলাদেশ- এটা আমি চাইনি। এই বাংলাদেশে এখন যে ঘটনা ঘটছে- এই ঘটনা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জীবনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।”

শিশুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘ভালো ছাত্র-ছাত্রী হও, রুচিশীল ভালো মানুষ হও। সমাজ কল্যাণের দিকে তোমাদের দৃষ্টি পতিত হোক, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে বাংলাদেশ আমরা কল্পনা করেছিলাম, সেই বাংলাদেশ আমরা ফেরত পেতে চাই। আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে পেতে চাই। আইনের শাসনকে আমরা ফিরে পেতে চাই। প্রত্যেকের অধিকার নতুনভাবে ফিরে পেতে চাই।”

দশম জাতীয় শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতা ‘শাপলা কুঁড়ি-২০১৮’ এর পুরস্কার বিতরণ উপেলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, অভিনয়, সংগীত, নৃত্যে ৮৫ জন ক্ষুদে শিল্পীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

জিয়া শিশু একাডেমির মহাপরিচালক এম হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে শাহরিয়ার সোহাগ ও সামিনা আখতারের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে শিল্পী শফি মণ্ডল, পরিচালক ছটকু আহমেদ, সংগীত শিল্পী জিনাত রেহানা, অভিনেত্রী রিনা খান ও শিশু প্রতিযোগী পিয়ানু মিত্র বক্তব্য দেন।

ইলিয়াস আলীর বাসায় ফখরুল

বুধবার সন্ধ্যায় বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, বড় ছেলে আরবার ইলিয়াস ও ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নির্বাহী সদস্য আয়েশা সিদ্দিকা মানি, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন।

এম ইলিয়াস আলী

সেখানে ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখনও আশা করি, ইলিয়াস আলী আমাদের মাঝে, তার পরিবারের মাঝে ফিরে আসবে, তার ছোট্ট মেয়ে বাবা বলে ডাকতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, যারা নিখোঁজ হয়ে গেছে, গুম হয়ে গেছে, তারা ফিরে আসবে।”

নিখোঁজ নেতাকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “যখন ইলিয়াস আলীর কথা মনে হয়, তখনই একজন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, সাহসী মানুষ যিনি কখনও নতি স্বীকার করেননি, তার কথা মনে পড়ে।”

ফখরুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গুমের ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত ব্যাপার ছিল না। আমরা বইয়ে পড়তাম, ল্যাতিন আমেরিকায় এসব ঘটনা ঘটত। বাংলাদেশে এটা শুরু হলো এই সরকার আসার পর থেকেই।

“এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি গুম আছেন, যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী (যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ছেলে), একজন ব্যারিস্টারসহ অনেকেই।”

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্যাতনের নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে বিরোধী পক্ষকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য।

“আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। আমরা মনে করি যে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ধরনের নির্যাতনকারী, নিপীড়নকারী সরকারের পতন হতে বাধ্য।”