বক্তৃতার ‘গরম’ মাঠে কেন থাকে না, প্রশ্ন বিএনপির নজরুলের

আলোচনা সভায় এসে যারা ‘গরম বক্তৃতা’ দেন, মাঠের আন্দোলনে তাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2019, 02:29 PM
Updated : 12 April 2019, 02:29 PM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য সক্রিয় হওয়ার তাগাদা দিয়ে তিনি বলেছেন,‘মুখে নয়, কাজে’ সাহস দেখাতে পারলেই সরকারের ‘পতন’ ঘটানো সম্ভব।

খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নজরুল বলেন, ‘‘এখানে এই আলোচনা সভায় বা প্রতিবাদ সমাবেশে যে কয়জন পল্টনে জনসভার মত জোরে বক্তৃতা করলেন, সেই কয়েকজন যদি তার সমর্থকদের নিয়ে আসতেন তাহলে তো জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অন্তত পনের-বিশ হাজার লোক হওয়ার কথা।

“কিন্তু হয় না কেন? যে গরম বক্তৃতা আমরা এখানে দিই, এই গরম সেদিন থাকে না কেন?”

নজরুল বলেন, ‘‘অতীতে দেখা গেছে, জনগণের আন্দোলনের মুখে কোনো স্বৈরাচারই টিকে থাকতে পারে নাই। ফিলিপিন্সের মার্কোসের (ফার্দিনান্দ মার্কোস) দমন নীতির বিরুদ্ধে জনগণ যখন রাস্তায় ট্যাংকের সামনে শুয়ে পড়েছে তখনই শুধু মার্কোসের পতন হয়েছে।

সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলতে চাই- আপনাদের ওই পরিমাণ সাহস আছে? মুখে আছে। যেদিন কাজে দেখাতে পারবেন, শুধু সেদিনই এ সরকারের পতন ঘটবে।”

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই আওয়ামী লীগের পক্ষে ‘ব্যালট ভরে বাক্স ভর্তি’ করার অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। কিন্তু তা ঠেকাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশের কোথাও প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছে কি না- সেই প্রশ্ন রাখেন নজরুল।

“বলতে পারেন, পুলিশ দাঁড়িয়েছিল, গুলি করত, মেরে ফেলতে পারত। অথচ আগেই তো বক্তৃতা দিলেন রাজপথে রক্ত ঝরাইয়া দেবেন। দিলেন না তারা? মুখের কথা এবং আচরণ আমরা যখন একরকম করতে পারব, পরিবর্তন তখনই আসবে। তা না, হলের মধ্যে গরম বক্তৃতাই আমরা করতে পারি বা পারব।”

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনকে বেগবান করার তাগাদা দিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আপনারা মুখে যেমন বলেন, তারা যদি দয়া করে কাজে দেখান, দেখবেন অনেক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার মত ব্যবস্থা হবে। সেটা না করা পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রাম অত জোরদার হবে না।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে নজরুল বলেন, “দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। তিনি দারুণভাবে অসুস্থ। তাকে মুক্ত আলো-বাতাসের মধ্যে যদি আনা না যায়, তাকে সঠিক চিকিৎসা যদি না করা যায়, আমরা হারাব তাকে। আর হারালে আপনার-আমার কার কত দাম সেটা জানা আছে আমাদের।

“কাজেই তাকে মুক্ত করার জন্য, তার আন্দোলনের সহযোগী হাবিব উন নবী খান সোহেলের মত আরও যারা বন্দি হয়ে আছেন, তাদের সবাইকে মুক্ত করার জন্য যে লড়াইয়ের প্রয়োজন, আসুন, সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিই।”

নেতাকর্মীদের ‍উদ্দেশে নজরুল বলেন, “আছি আপনাদের সাথে। আপনাদের সাথে না, আপনাদের সামনেই থাকব। কিন্তু চলেন, একসাথে নামি আমরা।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সভা কক্ষে ‘জিয়া আর্দশ একাডেমীর’ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের নেতা মো. আজম খানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল খালেক, মিয়া মো. আনোয়ার, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, কে এম রফিকুল ইসলাম রিপন, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।