খালেদাকে মুক্ত করে ফের বহুদলীয় গণতন্ত্র হবে: মঈন খান

আওয়ামী লীগ সরকার দেশে ‘অলিখিত বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে আবার দেশে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’ ফিরিয়ে আনবেন তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2019, 02:31 PM
Updated : 15 Feb 2019, 02:38 PM

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে একথা বলেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, “আজকে সরকার যেটা করেছে সেটা হচ্ছে অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। অলিখিত এই বাকশাল আজকে কী করছে? তারা গণতন্ত্রের ভান ধরেছেন। তারা মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে।

“এদেশের মানুষকে সতর্ক হতে হবে যখন এদেশের সরকারকে জার্মানির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নব্য স্বৈরাচার বলে অভিহিত করেছে, তখন সেই সরকার মুখে গণতন্ত্রের লেবাস পরে তারা স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য. একটি স্বৈরাচারি সরকারের চাইতেও গণতন্ত্রের ভানধারী সরকার আরো অনেক বেশি ক্ষতিকর এবং তারা দেশের মানুষের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে।”

বিশ্বের ১২৯টি দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে জার্মান সংস্থা 'বেরটেলসম্যান স্টিফটুং'র করা ‘স্বৈরতান্ত্রিক দেশ’র তালিকায় বাংলাদেশের ঢোকার খবরটি গত বছর মার্চে প্রকাশ পায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা একে ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা মনে করলেও জার্মান সংস্থার তালিকায় ‘স্বৈরতান্ত্রিক দেশ’ হিসেবে বাংলাদেশের নাম আসাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সরকার পরিবর্তনের আশা দেখছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভাবনীয় জয়ের বিপরীতে মাত্র ছয়টি আসন নিয়ে ভরাডুবি হয় বিএনপির। পরে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফল বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটি।

মানববন্ধনে সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন, ‘‘আমরা চাই, এদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, এদেশের মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেমন অতীতে একবার এদেশের মানুষের হাতে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় তুলে ধরেছিলেন।

‘‘ঠিক একইভাবে আগামীতে ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে এনে আমরা বাংলাদেশের মানুষের কাছে বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দেব।”

সরকার বিএনপিকে ‘ধ্বংসের ষড়যন্ত্র’ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া এদেশের বিএনপির নেতৃত্বে থাকেন, এদেশের গণমানুষের নেতৃত্বে থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগ কোনো দিন নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেই উপলব্ধি থেকে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপিকে এদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।”

আওয়ামী লীগ বিএনপির নেতাকর্মীদের দলে টানতে পারেনি দাবি করে মঈন খান বলেন, “আপনাদের মনে আছে, ২০১৪ সালে এই আওয়ামী লীগ প্রাণপনে চেষ্টা করেছিল এই বিএনপিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়ার জন্য। ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়েও বিএনপি ছিল সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ, বিএনপির একটি নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগ নিতে পারেনি।

“তারা বুঝতে পেরেছিল যে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে যেখানে আক্রমণ করতে হবে সেটা হল বেগম খালেদা জিয়া এবং বেগম খালেদা জিয়াকে যেনতেনভাবে কোনো প্রকারে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে পারে তাহলে বুঝি বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। এটাই ছিল আওয়ামী লীগের পলিসি।”

খালেদা জিয়াকে বিএনপির ‘প্রাণভোমরা’ অভিহিত করে তাকে ‘মিথ্যা’ রাজনৈতিক মামলায় কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মঈন খান বলেন, “দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করেও দেশের মানুষকে রুদ্ধ করা যায়নি, দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের পথ থেকে বিরত করতে পারেনি।”

তিনি বলেন, “দুই দিন আগে ছয় কংগ্রেস সদস্য তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশে আজকে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করেছে তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা একটি সন্ত্রাসী নির্বাচনের মাধ্যমে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ভোট রিগিংয়ের মাধ্যমে তারা সরকারে এসেছে।

“এই সংসদ হচ্ছে একটি প্রহসনমূলক সংসদ এবং এই প্রহসনমূলক সংসদের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হয়েছে সেই সরকারকেও তারা প্রহসনমূলক বলে অভিহিত করেছে।”