তিনি বলেছেন, “২০০৪ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগের পর প্রতিনিয়ত রাজনীতির শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে অশ্লীল ভাষায় একতরফাভাবে অভিযোগ করে গেছে। আমি সংসদে থেকেও সে অভিযোগ খণ্ডন করার সুযোগ পাইনি।
“আজ ১৪ বছর পর সংসদে ফিরছি। অনেক দিন চুপ করে ছিলাম। এবার ৩০ জানুয়ারি সংসদে গিয়ে সেদিনের অপমানের কথা বলব।”
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল দলের প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বি চৌধুরীকে। তখন তার আসন মুন্সীগঞ্জ-১ এ বিএনপির টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ছেলে মাহী।
বিএনপির শীর্ষনেতৃত্বের বিরাগভাজন হওয়ার পর ২০০২ সালে পদত্যাগ করতে হয় বি চৌধুরীকে। এরপর মাহীও সংসদ সদস্য পদ ছাড়েন। পদত্যাগের দুই বছর পর বি চৌধুরী বিকল্প ধারা নামে নতুন দল গঠন করেন, ওই দলের মহাসচিব করা হয় তখন বিএনপি ছেড়ে আসা আবদুল মান্নানকে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বিকল্প ধারা গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন বি চৌধুরী। এক কর্মসূচি পালন করতে ঢাকার মহাখালীতে গিয়ে পুলিশ ও বিএনপিকর্মীদের ধাওয়ার মুখে রেল লাইন ধরে তার পিছু হটার ছবি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ আলোচিত।
পদত্যাগের পরপর বি চৌধুরীর বাড়িতে হামলার ঘটনা সংসদে তুলতে চাইলেও সে সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
“আমি সংসদে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে মাননীয় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। একটি শব্দ উচ্চারণও করতে দেওয়া হয়নি আমাকে।”
বিএনপি ছেড়ে আসার পর বি চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘বেইমানির অভিযোগ’ এনে বিএনপি নেতারা মিথ্যাচার করেছিলেন বলে দাবি করেন মাহী।
তিনি বলেন, “বিএনপি নেতারা কীভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কীভাবে গণতন্ত্রকে ধুলিস্যাৎ করেছে, সে কথা সংসদে বলব। না হলে তারা নানাভাবে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করে যাবে।”
বিকল্প ধারা থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্যকে সংবর্ধনা দিতে ঢাকা বিএমএ মিলনায়তনে বিকল্প যুবধারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাহী।
এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে নির্বাচিত হয়েছেন বিকল্প ধারার মাহী ও মান্নান।
এই নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের প্রক্রিয়ায় অনেকটা এগিয়েছিল বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা। কিন্তু জামায়াত প্রশ্নে তাদের মতের মিল হয়নি।
জামায়াতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের সময় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামে থাকা বি চৌধুরী এবার ওই দলটিকে নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি শর্ত দেন, বিএনপি ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ না দিলে তাদের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন না তারা।
দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া ভুল ছিল বলে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন কামাল হোসেন। তিনি দাবি করেছেন, জামায়াত নেতাদের যে ধানের শীষে প্রার্থী করা হচ্ছে, তা বিএনপি তাকে জানায়নি।
কামালের এই বক্তব্যে ‘অবাক’ হয়ে মাহী বলেন, “কামাল হোসেন বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত থাকবে, তা তিনি জানতেন না। আজকে এত বিতর্ক, এত হৈ চৈ....আমরা বারবার করে বোঝালাম, অথচ আমাদের কথা খাটো করে দেখা হল।”
মাহী দাবি করেন, যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে বিকল্প ধারা লিখিতভাবে যে আপত্তি জানিয়েছিল, কামাল হোসেন তা অগ্রাহ্য করেছিলেন।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার উত্তরার বাড়িতে বিএনপি নেতাদের নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন প্রক্রিয়ার সময় এক বৈঠকে বিকল্প ধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানকে ‘আটকে রাখা’ হয়েছিল বলেও অভিযোগও করেন মাহী।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বর্তমান ঐক্যকে ‘দীর্ঘমেয়াদী’ বলে ঘোষণা দেন বি চৌধুরীর ছেলে। মাহীর বাবা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব হলেও দাদা কফিল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগের আইন প্রণেতা।
মাহী বলেন, “রাজনীতির মেরুকরণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে ঐক্য হয়েছে, তাকে স্বল্পমেয়াদী ভাবলে ভুল হবে। আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে এক কঠিন ঐক্যে রয়েছি, যা হবে দীর্ঘমেয়াদী।”