বিচার আপনাদের হবেই, এখানে না হলেও পরকালে: কামাল

বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে পুলিশকে ‘অপব্যবহার’ করা হচ্ছে অভিযোগ করে কামাল হোসেন বলেছেন, এর জন্য ক্ষমতাসীনদের শাস্তি পেতে হবে, এখানে কোনোভাবে পার পেলেও ‘পরকালে’ তা হবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2018, 10:07 AM
Updated : 19 Dec 2018, 11:52 AM

ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের ওপর ‘হামলা, নির্যাতনে’ যারপরনাই ক্ষুব্ধ কামাল হোসেন বলেছেন, এভাবে ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেয়ে তাদের বললেই তারা আওয়ামী লীগের ‘জয় মেনে নেবেন’।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর দেশব্যাপী বিএনপি ও তার জোট শরিকদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ করা হচ্ছে। এই জোটের শরিক হিসেবে কামাল হোসেনের দল গণফোরাম নেতারাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বেও রয়েছেন কামাল হোসেন।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় নিজের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান প্রবীণ আইনজীবী কামাল।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কোন ক্ষমতার বলে শাসন করছেন সেটা আমরা পরে বুঝব। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছেন। আজকে আপনাকে সাহায্য করার জন্য বলে দিচ্ছি, এখনই অবিলম্বে পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন।

“এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনের বলে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নাই।‍’’

এ ধরনের শাসন জীবনে কখনো দেখেননি দাবি করে কামাল হোসেন বলেন, “এটাকে যদি সুশাসন বলা হয় তাহলে মিথ্যা বলা হবে। আজকে কেউ যদি দাবি করে, এদেশে সুশাসন আছে তাহলে আমি বলব, সে মিথ্যুক। কী বলব এসব দেখতে হচ্ছে শুনতে হচ্ছে। এগুলো আমার জ্ন্য শাস্তি।”

সাহস থাকলে পুলিশ দিয়ে তাকে ধরিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন কামাল: “উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে আমি একথা বলছি। খুব সাহসী আপনারা, ধরেন আমাকে। আশ্চর্য স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে।”

ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “পুলিশকে যদি এভাবে অপব্যবহার করতে থাকেন, বিশ্বাস করেন আমার কী হয় না হয় সেটা না, আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না, ইনশাল্লাহ। সেটা মনে রাখবেন।”

আওয়ামী লীগ প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে কামাল হোসেন বলেন, “তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই! আপনারা আরও পাঁচ বছর থাকবেন এটাতো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়ার থেকে আমাদের কাছে বলে নিয়ে যান। বলেন যে, আরও পাচঁ বছর থাকি, আপনারা হাত তুলে মেনে নেন।

কামাল হোসেন (ফাইল ছবি)

“আমি বলব, সবাই মেনে নিয়েছে। এভাবে নির্বিাচনের নামে প্রহসনের মধ্য দিয়ে ৩০০ লোককে নির্বাচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য তো পাঁচ বছর থাকা? এই পাচঁ বছরের ব্যাপারে তো আমি এখনই হাত তুলে বলে দিতে পারি। ”

শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তো বলেছেনই আরও পাচঁ বছর থাকতে চান, আমার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চাই। এ পাঁচ বছর পরে আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আমি বলব- আরও পাঁচ বছর থাকেন।’’

সংবিধানের আলোকে চলতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, “সংবিধান শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। দেশ এভাবে চলতে পারে না। সংবিধান লংঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার উপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।”

তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক, স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার উপর আঘাত। এ আঘাত দেওয়া উচিত না। এ আঘাত দেশদ্রোহের শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহ করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবে।”

নির্বাচন কমিশনকে তার ‘গুরুদায়িত্ব’ পালনের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতা কামাল হোসেন বলেন, “সব ক্ষমতা আপনাদের। জনগণের ভোটের অধিকার আপনাদের রক্ষা করতে হবে। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোন সংবিধান পরিপন্থি কাজ করে, এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন, বলেন পুলিশ সরান।”

নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতার প্রয়োগ করলে ভালো নির্বাচন হবে, অন্যথায় পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও ৪৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক এই আলোচনার সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজুমল আহসান কলিমুল্লাহসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম রহমান ভূইয়া।