আ. লীগের ওপরই হামলা হচ্ছে বেশি: এইচ টি ইমাম

নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনায় আওয়ামী লীগই আক্রমণের শিকার হচ্ছে বেশি বলে দাবি করেছেন এইচ টি ইমাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2018, 04:42 PM
Updated : 12 Dec 2018, 04:42 PM

বুধবার নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, “আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি হামলা হচ্ছে। আমাদের দুইজন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তৃণমূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আওয়ামী লীগের এমন নেতাকর্মীদের উপর বেছে বেছে আক্রমণ হচ্ছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর, বগুড়া, চুয়াডাঙা, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মিরপুর, শাহজাদপুর ও নরসিংদীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনায় এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, “এই বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। কারণ তাদের কাছে অনেকে অন্য ধরনের কথা বলে।”

মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ের দানারহাট এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগে গেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ইমাম বলেন, “ঘটনাটি দলটির মনোনয়ন বাণিজ্যের বহিঃপ্রকাশ। আমরাও তো খবর রেখেছি, উনি ওখানে গিয়েছেন, পুলিশকে কোনো খবর দেননি। তাদেরও জানা ছিল না।

“বিএনপির পুরানা পল্টন ও গুলশানে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে তুমুল তোলপাড়ের বহিঃপ্রকাশই মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা। তার দলেরই লোকেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না সেখানে।”

সহিংসতার খবর প্রচারে সংবাদমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, “এ বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে।”

তিনি  বলেন, “আমাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে যারা নির্বাচন করছেন, তাদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। মাহী বি চৌধুরীর ওপরও হামলা হয়েছে। আমরা কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নেতৃত্বাধীন, এমনভাবে তাদের ব্যবহার করুন যাতে ঘটনাগুলো না ঘটে।”

নির্বাচন কমিশন সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থ কি না এমন প্রশ্নে এইচ টি ইমাম বলেন, “ব্যর্থতা বলব না, তাদের সতর্ক করেছি। বলেছি, নির্দেশ দেন দোষী ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে যেন ব্যবস্থা নেয়।”

ইসির ভূমিকা মূল্যায়নে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখনও যথেষ্ট নিরপেক্ষ, নির্মোহ। তারা চেষ্টা করছেন এবং আমাদের কাছেও অনুরোধ করেছেন দায়িত্ব পালনের।”

নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান তিনি।

গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করার অনুরোধ রাখেন  এইচ টি ইমাম।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চারটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ‘মারাত্মক তথ্য’ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“নিবন্ধিত ১১৮টি সংস্থার মধ্যে চারটিকে নিয়ে আমাদের কাছে মারাত্মক তথ্য আছে। আমি নিজে জানি এগুলোর বিষয়ে। এরা একেবারেই দলীয়। এরা তো এনজিও ব্যুরো থেকে যখন নিবন্ধন করেন, তখন বলেন না যে, তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। ইসিতে তখন নিবন্ধন হয়ে যান।”

নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এমন সংস্থাই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউজ এবং মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ- এই চারটি পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচনে ‘বিপর্যয়  ঘটাতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এইচ টি ইমাম।

তিনি বলেন, “ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রধান তালেয়া রহমান, যিনি শফিক রহমানের স্ত্রী। বিএনপির বড় নেতা ও লেখক, তাদের পক্ষে প্রচার প্রচারণা করেন। এই অবজারভেশনের নামে নির্বাচনের ভেতরে ঢুকে নানাভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। খান ফাউন্ডেশন- মঈন খানের স্ত্রীর নামে নিবন্ধিত, একেবারে দলীয় সংস্থা এটি।

“লাইট হাউজের প্রতিষ্ঠাতা তারেক রহমান নিজে। সরাসরি রাজনৈতিকভাবে প্রভাব সৃষ্টি করেন তিনি। মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ যেটি এর আগে অধিকার নামে ছিল। অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খানের সাথে বিদেশি সংস্থার যোগাযোগ ছিল বলে তাদের নিবন্ধন আমরা বাতিল করেছিলাম।”

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে এ সংস্থাগুলো থাকা যথেষ্ট ‘উদ্বেগের’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ-জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে ভোট পর্যবেক্ষণের বাইরে রাখার দাবি জানায় বিএনপি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বর্তমানে রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার পক্ষে প্রচারণা চালান এবং টিভি টকশোতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেন বলে অভিযোগ বিএনপির।

জানিপপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না জানতে চাইলে এইচ টি ইমাম বলেন, “কোনো পর্যবেক্ষণ নাই। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর কলিমুল্লাহ, উনি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, তাই এর সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে না। সম্পৃক্ততা নেইও। এটি এখন পরিচালনা করেন অন্যান্যরা।”

নির্বাচন কমিশনে আসা আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধি দলে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সেলিম মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল ছিলেন।