তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের ‘যে ভূমিকা রাখা উচিত’, তা তারা রাখছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে পাঁচ বছর আগে নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবার আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তাদের। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসা দলটির নেতারা নিয়মিতই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।
৮ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্ব সংস্থাটির একজন সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের পদক্ষেপ চেয়েছিলেন তারা।
ওই সফরেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ঢাকায় নিয়োজিত বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভিযোগ ও দাবিগুলো তুলে ধরেছিলেন বিএনপি নেতারা।
এরপরে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে তার সুরাহা চেয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। তাদের সে সব অভিযোগের ভিত্তিতে ‘কিছুই করা হচ্ছে না’ বলেও অভিযোগ করছেন তারা।
তবে এসব বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো দেশের কূটনীতিকদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি। এরমধ্যে বুধবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর বিল মোলারসহ দুইজন কর্মকর্তা।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এরমধ্যে উত্থাপিত বিলে বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় দলগুলোর সহিংসতার শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব দল ও গোষ্ঠীকে কোনো ধরনের সহায়তা না করার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কংগ্রেসে উত্থাপতি এই বিলটিকে কীভাবে দেখছেন।
“কিন্তু বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্যে তাদের যে ভূমিকা রাখা উচিত, সেই ভূমিকা তারা রাখছেন না।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আর কথা না বাড়ালেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান তার মতামত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “এই প্রসঙ্গে আমি একটা বাক্য বলব, মার্কিন কংগ্রেস কি দেখে, তাদের কি চোখে আছে যে, তাদের রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে কে আক্রমণ করে? সেটা কি তারা দেখেন, না সেটা দেখেন না।
“অন্য কী দেখে? সেই প্রশ্ন আমি করছি।”
‘জামায়াতের কেউ নেই’
জামায়াতে ইসলামীর দুই ডজন নেতা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে বিএনপির প্রত্যয়ন নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করছেন সেখানে জামায়াতের কেউ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর এখানে কেউ নেই। যারা আছে সব বিএনপির, সব ধানের শীষ।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরেই এবার দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশে বিএনপির প্যাডে মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষরে প্রত্যয়নপত্র পেয়েছেন জামায়াতের ২৪ জন সদস্য। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তারা এবার ধানের শীষে নির্বাচন করবেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি থেকে ২৯৫টি আসনে ৬৯৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
বাকী পাঁচ আসন কোন দলকে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, “সেই পাঁচটা হচ্ছে আমাদের যারা জোটে আছেন, ফ্রন্টের সিনিয়র নেতাদের জন্য আসনগুলো আমরা রেখেছি। ৬৯৬ জন প্রার্থী দিয়েছি। আমরা শুরুতে বলেছি যে, প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছি এজন্য যে, সকলের বিরুদ্ধে মামলা আছে।
“আমার হলফনামায় ১০০ মামলার কথা লিখতে হয়েছে। আমি তো হলফ করে দিয়েছি।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের অন্য নেতাদের মধ্যে মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।