ইসি কি সুষ্ঠু ভোট চায়, প্রশ্ন ফখরুলের

পুলিশি গ্রেপ্তার ও মামলা অব্যাহত থাকায় সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 07:15 PM
Updated : 20 Nov 2018, 07:15 PM

তিনি বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন আসলে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় কি না, সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

“তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ একইভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং হয়রানি করছে। জামিনের জন্য যারা যাচ্ছেন এবং যারা জামিন পেয়েছেন, তাদের জামিনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। তারা (ইসি) এসব বিষয়ে কিছুই করছেন না, তারা তাদের কোনো দায়িত্ব পালন করছেন না।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বিভাগের ৩৬ সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন যদি একটা সমতল ভূমি তৈরি না করে, পুলিশের এই গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ না করে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বন্ধ না করে, তাহলে এই নির্বাচন জনগণের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি কামাল হোসেনকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এলেও ইসির ভূমিকা নিয়ে সমালোচনামুখর।

মঙ্গলবার ইসিতে পাঁচটি অভিযোগ নিয়ে বিএনপি চিঠি দিলেও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘ঢালাও অভিযোগ’ আমলে নেওয়া হবে না। 

ফখরুল বলেন, “অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা অবস্থান নিয়ে নিয়েছেন যে তারা এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করবেন না।”

পুলিশের ভুমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমরা আবারও খবর পাচ্ছি যে, পুলিশকে দিয়ে আবারো নির্বাচনে কারচুপি করার নীলনকশা তৈরি করা হচ্ছে। যে কর্মকর্তা পুলিশের সদর দপ্তরে বসে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেই একই পুলিশ কর্মকর্তা আবারও নীল নকশা তৈরি করছেন যে কীভাবে নির্বাচনকে সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি আশা করব নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হবে, তারা জেগে উঠবে। সাংবিধানিকভাবে যে দায়িত্ব তাদের রয়েছে, ক্ষমতা তাদের রয়েছে, সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারা তাদের কাজ করবে।”

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা কবে চূড়ান্ত হবে- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ২৭৯ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ড এই সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। স্কাইপ বন্ধ থাকায় অন্য ভিডিও কল অ্যাপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

‘সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে’

আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে দলের নেতা-কর্মী সবার সক্রিয় উপস্থিতি চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব গত তিন দিন ধরে দিনে কমপক্ষে ২০/২২ বার এই কথাই বলছেন যারা মনোনয়নের জন্য আসছেন।

“তিনি এই ওয়াদা নিচ্ছেন, আমরা ভোটের দিনে এই আন্দোলনটা করব। সমস্ত মানুষকে নিয়ে আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব “

“আমার বয়স হয়ে গেছে, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপরেও আমি বলতে চাই, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা সংগ্রাম করব, লড়াই করব। ইনশাল্লাহ ৩০ ডিসেম্বরের পরেই এদেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে, ওদের পতাকা উড়বে না,” নেতা-কর্মীদের বলেন ফখরুল। 

মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত দলের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা যদি আজকে জনগনের কাছে যাই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসি, যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভোটের দিনে ভোট দিতে যাই, তাহলে কোনো শক্তি নেই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে।

“পালিয়ে পালিয়ে না বেড়িয়ে ভোটের জন্য যান, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যান এবং ভোটের দিন সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসুন। ওইখানেই সমস্ত আন্দোলনকে নিবিড় করুন। তাহলেই আমরা জয়যুক্ত হব।”

তিনি বলেন, “আমরা এক কঠিন সময়ে আছি। আমাদের দেশনেত্রী মিথ্যা মামলায় কারাগারে, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে। আজকে আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আমরা কি মুখ বুঝে বসে থাকব? আমরা কি এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করব না? ১০ বছর চেষ্টা করছি, এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। এই সুযোগ আজকে এসেছে।”

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বিএনপির লাখ লাখ কর্মী। আপনাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে যত মামলাই থাকুক। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলতে হবে- আসিতেছে শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন। দিন তো এসে গেছে, ৩০ ডিসেম্বর

“এটাই লড়াই। আমরা এই নির্বাচনেই এই জালেম সরকারের পতন ঘটাব। মানুষের কাছে গিয়ে একটাই কথা বলবেন, আমাদের সমস্ত লড়াই ওই ভোটের দিন আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাব।”

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, “তারেক জিয়াকে কি আপনারা ভালোবাসেন? তাহলে তাকে আপনাদের ভালোবাসার একটা প্রমাণ দিতে হবে। সেটা হচ্ছে সামনে ৩০ ডিসেম্বর ভোট।

“আপনাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে আদায় হবে? আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন, যারা নেই, তাদেরকে একটা প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যত অত্যাচার হোক, আরও যদি এক লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়, আপনারা কোনোভাবে ভোটের ময়দান ছেড়ে যাবেন না।”

ফখরুল বলেন, “সরকার এত ভয় পেয়েছে যে, তারেক সাহেব লন্ডন থেকে কথা বলছেন স্কাইপে, সেটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে।

“আবারো ভয় দেখাচ্ছে। বিভিন্ন রকম কৌশল। ধানের শীষ সম্পর্কে একটা রিটও করিয়েছে কালকে। ধানের ছড়া, ধানের শীষ বলা যাবে না। কতটা ভীত সন্ত্রস্ত হলে সরকার এসব করতে পারে।”

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভায় তারেক রহমানের জীবন- কর্মের উপর ‘তুমি আছো নয়নে হৃদয়ের গহীনে’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে একটি গানও গাওয়া হয়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান, জয়নাল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক ডিএলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি একটি কবিতা পাঠ করেন।