বৈঠকে উপস্থিত ১৪ দলের এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “ড. কামাল ও বিএনপি নেতাদের অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো উত্তর না দিতে পেরে চুপ করে থাকেন।”
সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সাত দফা দাবি নিয়ে বুধবার গণভবনে দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা এই সংলাপে অংশ নেন। অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিলেন কামাল হোসেন।
ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে প্রস্তাব তোলে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং ওই সময়ে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা করে তার নেতৃত্বে আরও ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করতে হবে।
তাদের এই প্রস্তাব যে সংবিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক, তা ১৪ দলের এক নেতা সঙ্গে সঙ্গেই তুলে ধরেন বলে বৈঠকে থাকা একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
তিনি বলেন, “ড. কামাল হোসেনের কাছে তখন জানতে চাওয়া হয়, সংবিধানের কোথাও কি এ ধরনের বিধান আছে? যদি সংবিধান পরিপন্থি এ ধরনের সরকার গঠন করা হয় এবং তাদের অধীনে নির্বাচন হয়, এরপর কেউ যদি উচ্চ আদালতে রিট করে এবং আদালত যদি ওই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে তখন কী হবে?
“এ প্রশ্নের উত্তরে ড. কামালরা কিছুই বলতে পারেননি,” বলেন ওই ব্যক্তি।
বৈঠকে থাকা আরেকজন নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কামাল হোসেনের কাছে জানতে চান, ৭২ এর সংবিধানে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করার বিধান কি কোথাও ছিল?
“এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি ড. কামাল। আমাদের সংবিধানে কোথায় আছে এরকম উপদেষ্টাদের দিয়ে দেশ চালানো যায়- এই প্রশ্নেও নিরুত্তর ছিলেন তিনি।”
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার দাবি তোলেন।
“তখন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতার জানতে চান, নির্বাহী বিভাগ কি সাজাপ্রাপ্ত কাউকে মুক্তি দিতে পারে? এটা কি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সপক্ষে? এ প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চুপ থাকেন ফখরুলরা,” বলেন বৈঠকে অংশ নেওয়া ওই নেতা।
তিনি বলেন, “আর খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি কামাল হোসেন।”
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানোর প্রস্তাব করা হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ১৪ দলের এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া সংবিধানের পরিপন্থি নয় কি? তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।”
নিজেদের সব দাবির পক্ষে বাইরে যুক্তি দেখিয়ে আসা কামাল হোসেনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নিশ্চুপ থাকার বিষয়ে কামাল হোসেনের প্রতিক্রিয়া জানতে বুধবার রাতে তার মোবাইলে ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে কামাল বলেছিলেন, ৭ দফা নিয়ে তারা আরও আলোচনা করতে চান।
“আজকের সংলাপে আমরা আমাদের সাত দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি। আমরা বলেছি যে অল্প পরিসরে আরও আলোচনার করার ব্যাপারে ইচ্ছুক।”
দলীয় নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিনি তো আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।”
এদিকে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধানের বাইরে যাব না। পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি, এটা (ঐক্যফ্রন্টের দাবি) মেনে নেওয়ার মতো সংবিধানসম্মত কোনো কারণ নেই।”
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অনির্বাচিত উপদেষ্টাদের নিয়ে সরকার গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তাব নাকচ করে কাদের বলেন, “এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা। এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁক-ফোকর হয়ত খুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান-ইলেভেনের মতো সেই অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। আমরা সবাই মনে করছি।”
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে কাদের বলেন, “নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে ফাঁক-ফোকর গলে কোনো অপশক্তিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেবেন না। যেটা আপনাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, আমাদের সকলের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।”
এর প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটা বলার অর্থই হলো জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের দাবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই বলে এমন কথা তারা বলছেন। আজকে নির্বাচন পেছানোর কথা আমরা বলছি নির্বাচনকে শুধুমাত্র অর্থবহ করার জন্য।“