‘গণতন্ত্রের মুক্তি’ আনবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, আশা বিএনপির

২০ দলীয় জোট গঠন করে সরকার পতনের আন্দোলনে সফলতা না পেলেও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ‘গণতন্ত্রের মুক্তি’ এনে দেবে বলে আশা করছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 06:37 PM
Updated : 13 Oct 2018, 06:37 PM

শনিবার সন্ধ্যায় সরকারবিরোধী নতুন এই জোট গঠনের ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রত্যাশা কথা শোনান।

তিনি বলেন, “আমরা এখন একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে মুক্ত বাংলাদেশের, সেই স্বপ্ন হচ্ছে একটা মুক্ত সমাজের। আমাদের মানুষ যারা লড়াই করেছে, করছে তারা একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে চায়।

“আজকে এই ঐক্যের মাধ্যমে এই লড়াই শুরু হলো নতুন আঙ্গিকে। আমরা বিশ্বাস করি এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তি মিলবে। আমরা আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এবং আমরা শপথ নিয়েছি যে, গণতন্ত্রের অধিকারগুলোকে আদায় করে তারপরেই আমরা ঘরে ফিরব।”

২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াতসহ চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি, যার পরিসর বেড়ে পরে ২০ দলে রূপ নেয়।

জোট গঠন করলেও ছয় বছরের বেশি সময়ে রাজপথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি।   

ক্ষমতাসীন দলটির সাবেক নেতা ড. কামালকে পাশে রেখে শনিবার বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আজকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি নব সূচনার দিন। নব সূচনা দিন এই জন্য বলছি যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিল, বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছিল, সেই জাতি আজকে গণতন্ত্রবিহীন।

“সেই জাতি আজকে প্রতিনিয়ত স্বৈরাচারের অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করে চলেছে। সেই জাতির মুক্তির জন্য, সেই জাতির গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনবার গণমানুষের আন্দোলনের একটা নতুন সূচনা হলো।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে জোট গঠনে কয়েক মাসের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে দিনভর টানাপড়েনের পর শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট নামে এই জোটের ঘোষণা আসে।

তবে গত কয়েক মাস ধরে কামালের সঙ্গে এই জোট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকা বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে।

প্রায় একই সময়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির কাছ থেকে জামায়াত ছাড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে শুধু দলটিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ঐক্য গড়বে না বি চৌধুরীর দল।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের ঘোষণায় সাত দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসা আরেক নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

এই সাত দফার শুরুতেই রয়েছে- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবির পাশাপাশি খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি।

নতুন এই সরকার বিরোধী জোটে সব গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আসুন আমরা ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্যগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি, একটা সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করি সেখানে সকলের সমান অধিকার থাকবে, বেঁচে থাকাবার, কথা বলবার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার। আসুন আমরা সেই সংগ্রামে সকলে শরিক হই ।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে এই নতুন রাজনৈতিক জোটের ঘোষণা দেন অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর আহমেদ বক্তব্য দেন।

জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আবম মোস্তফা আমিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও ফজলুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।