বিএনপি নেতারা এক দিকে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে বলছেন; অন্যদিকে ১৪ দল পাল্টা হুঁশিয়ারিতে বলেছে, ‘আন্দোলনের নামে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি’ মোকাবেলায় তারা মাঠে থাকবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি দুই দিন পিছিয়ে শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে।
এরপর দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ১৪ দলের সভা শেষে শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে সমাবেশ করার পাশাপাশি ‘ঢাকা দখলে রাখার’ ঘোষণা দেন চৌদ্দ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
তিনি বলেন, “চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখব কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না।”
এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ‘যুক্তফ্রন্ট’ এবং কামাল হোসেনের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নির্বাচন সামনে রেখে যে জোট তৈরি করেছেন, তাতে যোগ দিয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে থাকা বিএনপি।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ পক্ষ থেকে।
তার আগে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক শক্তির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরির আভাস মিলেছে।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের ‘সর্বাত্মক প্রস্তুতি’ নিতে বলেন।
পহেলা অক্টোবর থেকে ‘রেডি হয়ে যাওয়ার’ ডাক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এবার খালি মাঠে গোল দিতে দেব না।… জনগণকে নিয়েই আমরা থাকব।”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম ১৪ দলের ‘সমাবেশ প্রস্তুতি সভা’ শেষে বলেন, “আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ইনশাল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলে থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।”
যে কোনো ‘চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে জোটের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "আপনারা এলাকায় প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই অপশক্তি মাঠে নামতে না পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন।"
নাসিম বলেন, “আগামী একটা মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় আপনারা সজাগ থাকবেন। কোনো চক্রান্ত নৈরাজ্য হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ইনশাল্লাহ আমরা প্রতিহত করব।"
১৪ দল নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে জানিয়ে নাসিম বলেন, “আমাদের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে জেলা উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারের কাজ শুরু হয়েছে। শরিক দলগুলোও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনের প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে।”
কামাল-বদরুদ্দোজার ‘ঐক্যের’ দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “আমরা এবার চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক। কিন্তু যখন কোনো উত্তপ্ত রাজনীতিবিদ, দলছুট রাজনীতিবিদ, যাদের আদর্শের কোনো ঠিকানা নেই, দলের কোনো স্থায়ী ঠিকানা নেই, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন আমাদের সন্দেহ হয়- আবারও সেই অসৎ চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে।"
মহানগর নাট্যমঞ্চে শনিবারের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, "আপনারা ১৪ দলের প্রোগ্রামে আসবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। ঢাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।”