ভোট চুরির আরেকটি কৌশল ইভিএম: মোশাররফ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগকে সরকারের ভোট চুরির কৌশল বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2018, 12:35 PM
Updated : 29 August 2018, 12:35 PM

বৃহস্পতিবার  দুপুরে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।

সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনসহ ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, একাদশ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার আমরা মানি না। ইভিএম ব্যবহার ও আরপিও সংশোধনের যে অপচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে তা থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

“যদি এই নিয়ে আপনারা (ইসি) অগ্রসর হন তাহলে আগামী দিনে জনগণের আদালতে আপনাদের বিচার হবে।”

ইভিএম ব্যবহার নির্বাচন কমিশনের ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে আরপিও সংশোধনের কথা বলা হচ্ছে। এই সংশোধন কিছু পদ্ধতি চুরি করার পদ্ধতি, আরেকটি হচ্ছে ইভিএম, যার মাধ্যমে একশ আসনে একসাথে চুরি করার পদ্ধতি বা কৌশল। নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করি।”

একাদশ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অতীত বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটা সংলাপের ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলই ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছিল।

“আজকে কেন ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আনা হচ্ছে? উদ্দেশ্য সরকারের ভোট চুরি। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হীন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। দেশে অলিখিত বাকশালকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আজকে ইভিএম ও আরপিও সংশোধনের এই উদ্যোগে নেওয়া হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘তড়িঘড়ি করে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ এবং বিতর্কিত ইভিএম চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নাগরিক শঙ্কা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কায়সার কামাল।

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, নিপুণ রায় চৌধুরী, জাসাসের সহ-সভাপতি শাহরিয়া ইসলাম শায়লা প্রমুখ।

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)

‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে ইভিএম ব্যবহার’

একাদশ  নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনাকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পটভূমি দাবি করে এর বিরোধিতা করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গতকাল নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালউদ্দিন সাহেব বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০টি আসনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

“আমরা মনে করি, ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় দূরভিসন্ধিমূলক ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা জাতীয় নির্বাচনে বিতর্কিত ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা করছে, যা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।”

রিজভী বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা করছে। ভারতেও দুইদিন আগে বিরোধীদলগুলো ইভিএম ব্যবহার না করতে সে দেশের নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

“নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা মূলত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং রচনার পটভূমি বলে আমরা মনে করি।”

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ইভিএম ব্যবহারের ক্রুটি এবং এই সংক্রান্ত গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে তিনি বলেন, “ইভিএম নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে তখন এই ধরনের উদ্যোগ কার ইশারায় ও কিসের ইঙ্গিতবাহি তা জাতির কাছে সুস্পষ্ট।

“বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধানের রিপোর্ট থেকে এটি সুস্পষ্ট যে ইভিএম সহজে হ্যাক করা যায়, চাইলে এক মুহূর্তের মধ্যে ওই মেশিনের সব ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব। ভোটারদের সংখ্যা বাড়ানো-কমানো থেকে শুরু করে যে কোনো প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটকেও পাল্টে দেওয়া যায়। ইভিএম দূর থেকে ম্যানিপুলেট করা যায়। ভোটরের অনুপস্থিতিতে তার নামে জালভোট দেওয়া সম্ভব।”

ইভিএমে ভোট চুরির ‘অফুরন্ত’ সুযোগ রয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, “ইভিএমে সফটওয়ার পরিবর্তন বা বন্ধ করে নির্বাচনে অস্থিতিশীলতা ও শূন্যতা সৃষ্টি করা সম্ভব। এই যন্ত্রের ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরির অফুরন্ত সুযোগ থাকবে বলেই অবৈধ সরকার নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে ইভিএম ব্যবহারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে এখন ডিজিটাল মেশিনে কারচুপির ওপর নির্ভর করতে চায় শাসকগোষ্ঠি।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত সপু, নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ।