কারাগারে খালেদার আরেকটি ঈদ

বিএনপি নেতারা ‘ঈদের আগেই’ তাদের নেত্রীর কারামুক্তি আশা করেছিলেন; কিন্তু আরও একটি ঈদ কারাগারেই কাটল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2018, 02:43 PM
Updated : 22 August 2018, 04:56 PM

তিন যুগের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার মোট চারটি ঈদ কারাগারে কেটেছে।  আর জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর এটি কারাগারে তার দ্বিতীয় ঈদ।

গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে রাখা হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি। অবশ্য বিশেষ বিবেচনায় দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে কারাগারে তার সঙ্গে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি ছাড়াও রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের মত অভিযোগে মোট ৩৪টি মামলা রয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে ৩১টিতে জামিন পেলেও বাকি তিনটিতে না হওয়া পর্যন্ত খালেদার কারামুক্তি ঘটছে না বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

কারাগারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার কোরবানির ঈদের দিন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে সকালে দুধ-সেমাই, জর্দা এবং মিষ্টি দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে। তার পছন্দ শুনে সে অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে দুপুরের খাবার।

খালেদা জিয়ার স্বজনরাও বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে দুপুরে কারাগারে গিয়েছিলেন তার সঙ্গে দেখা করতে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হলেও বাসা থেকে আনা খাবার ভেতরে নিতে দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।  

বেলা আড়াইটার আগে আগে চারটি গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার আত্মীয়দের কয়েকজন আর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসার কয়েকজন কর্মী মিলিয়ে মোট ২০ জন কারাগারের সামনে পৌঁছান।

তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার সেজ বোন সেলিনা ইসলাম, তার স্বামী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ছোট ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার, তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা জামান বিন্দু ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং তার ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমানকে কারাগারে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।

কারাগারের কর্তকর্তারা জানান, বাকিরা কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন না।

এ পর্যায়ে স্বজনরা টেলিফোনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। বেশ কিছু সময় তারা গাড়িতে বসে থাকেন অনুমতির অপেক্ষায়।

তাতে ফল না হওয়ায় বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে কোকোর স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে কারাগারের ভেতরে যান। এরপর বাকি পাঁচজনও কারাগারের ভেতরে ঢোকেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন স্বজনরা।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুতির শাড়ি পরে নিজের কারা কক্ষ থেকে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে অতিথি কক্ষে আসেন খালেদা জিয়া । দুই পাশ থেকে ধরে তাকে নিয়ে আসেন কারাগারের দুই কর্মী। 

পরিবারের সদস্যরা জানান, কোকোর মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করেন খালেদা জিয়া। সবার সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন।

অন্যদিকে সাঈদ এস্কান্দারের ছেলে, বিন্দুর স্বামী শফিউজ্জামান, খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তারসহ গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র কর্মচারীরা সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে ফিরে যান।

এর আগে বেলা ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের জন্য কারাগারের সামনে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ বিএনপি নেতারা।  কিন্তু ফটকে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কারাগারে কারো সাক্ষাতের অনুমতির সংবাদ তাদের কাছে নেই। পরে নেতৃবৃন্দ সেখান থেকে চলে যান।

গত রোজার ঈদে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মোট ২১ জনকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তখনও বিএনপি নেতাদের সে সুযোগ হয়নি।

১৯৮১ সালে স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া। ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। প্রতিবারই  ঈদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন আয়োজন করে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার পর আদালত থেকেই তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের ওই কারাগারে নেওয়া হয়। 

এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সংসদ ভবনে স্থাপিত উপ কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। সেখানেও তার কাটাতে হয়েছিল দুটি ঈদ।