রাজনৈতিক তকমায় ‘কিশোর বিদ্রোহ’ দমনের চেষ্টা: সেলিম

সরকার নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলনকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তকমা দিয়ে ‘বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2018, 03:28 PM
Updated : 11 August 2018, 03:28 PM

ওই আন্দোলনের সময় ‘উসকানিমূলক অপপ্রচারের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এবং সংঘর্ষের ঘটনায় রিমান্ডে পাঠানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে শনিবার এক সংহতি সমাবেশে এই অভিযোগ করেন তিনি।

ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘লেখক-শিল্পী-ছাত্র-শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী’ ব্যানারে এই সংহতি সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিও উপস্থিত ছিলেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম অভিযোগ করেন, “শিক্ষার্থীদের এই অরাজনৈতিক আন্দোলনকে বুর্জোয়া দুটি দলের ট্যাগ দিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে সরকার। আন্দোলনের মূল মর্মবাণীকে নিঃশেষ করে দিতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করেছে।”

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সপ্তাহজুড়ে রাজধানী অচল করে শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনকে সেলিম বর্ণনা করেন ‘কিশোর বিদ্রোহ’ হিসেবে।

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিল- রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ চলছে। শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক, জেন্ডার বৈষম্যসহ নানা ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্র পচে গলে গেছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দিকটি শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়ে গেছে।”

নিরাপদ সড়কের দাবিতে এই আন্দোলনের মধ্যে ফেইসবুক লাইভে এবং আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরকারের সমালোচনা করা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সিপিবি সভাপতি বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গ টানেন।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। এই আহ্বান তো সরকারের বিরুদ্ধে ছিল, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। সরকারের বিরুদ্ধে বলা আর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা এক জিনিস নয়।”

সরকারের ভেতরে একটি ‘মাফিয়া চক্র’ ঢুকে পড়ায় গণপরিবহন ব্যবস্থার সংস্কার করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সেলিম।

তিনি বলেন, “মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন শ্রমিকের ঘাড়ে বন্দুক রেখে মালিকের স্বার্থ হাসিল করে চলেছে, যেখানে সরকারও অসহায়।”

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, যে কোনো ‘সংবেদনশীল সরকার’ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন থেকে নতুন শক্তি সঞ্চয় করে উন্নয়নের পথ যথাযথভাবে অনুসরণ করত।

“কিন্তু এ সরকার কোনো সমালোচনা গ্রহণ করতে চায় না। সরকার যা করবে না, তা নিয়ে অন্য কেউ কথা বলুক, সরকার তা চায় না। সরকার এদেশের নাগরিকদের মনে করে প্রজা। সরকার জনগণের শক্তি ধারণ করতে অক্ষম।”

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলনে সরকারের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন অর্থনীতির অধ্যাপক।

প্রধানমন্ত্রীর দিকে ইংগিত করে তিনি বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি বলেছেন, কোটা থাকবে না। পরে বললেন, কোটা থাকবে। শিক্ষার্থীরা তাকে কীভাবে বিশ্বাস করবে? নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নামা শিক্ষার্থীদের তিনি ঘরে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন। শিক্ষার্থীরা কেন তাকে বিশ্বাস করে ঘরে ফিরে যাবে?”

শিক্ষার্থীদের জেলে পুরে, সাংবাদিক পিটিয়ে সরকার জনগণের মনে ‘ভয় ঢুকিয়ে দিতে চাইছে’ বলে মন্তব্য করেন আনু মহাম্মদ।

তিনি বলেন, “সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে, স্যাটেলাইট নিয়ে গৌরব করে বেড়াচ্ছে। সেই স্যাটেলাইটের বদৌলতে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরকার ভয় পাচ্ছে।”

শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আলোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এক দিন আগে ফেইসবুকে লিখেছেন-বাংলাদেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

এ প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, “নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের নিরস্ত্র আন্দোলনে চাপাতি, রিভলবার নিয়ে কারা হামলা চালাল- তা এখন সবাই জানে। অথচ পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করল না। ছাত্রলীগ সেখানে উর্দিবিহীন পুলিশের ভূমিকায়, আর পুলিশ উর্দিধারী ছাত্রলীগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। কারা হেলমেট পরে এসেছিল তা গণমাধ্যমের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব দেখেছে। এরা কি আইনের ঊর্ধ্বে?

“দিনের পর দিন মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারের গল্প ফাঁদছে সরকার। এটা কি আইনের ঊর্ধ্বে নয়?”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ‘বিএনপি-জামায়াত ঢুকে পড়েছে’ বলে যে অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা করে আসছেন, তার সূত্র ধরে আনু মুহাম্মদ বলেন, “বিএনপি-জামায়াত যদি আক্রমণকারী হয়ে থাকে, তবে তাদের ধরতে অসুবিধা কোথায়? এই সরকারের আমলে বিএনপি-জামায়াত বেশি আনুকূল্য পাচ্ছে। তাদের মূল্য দেওয়া হচ্ছে।”

শিক্ষার্থী আন্দোলনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষমা’ করার আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় শিক্ষামন্ত্রীরও সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ।

মন্ত্রীর কারণেই শিক্ষাঙ্গনে ‘সন্ত্রাসী কারবার বেড়ে গিয়ে মহাবিপদ নেমে এসেছে’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী মোশরেফা মিশু, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, লাকী আক্তার, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, দৃকের মহাব্যবস্থাপক এস এম রেজাউর রহমান, নারী কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস পপি এই সংহতি সমাবেশে বক্তব্য দেন।