বুধবার ঢাকার পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে (সিপিবি ভবনে) এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জোটের সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এই জোটে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, তাদের এই জোট ‘ইলেকশন অ্যালায়েন্স’ না হলেও ভোটের সংখ্যা ‘রূপান্তরিত করার’ চেষ্টায় থাকবে।
“এটাকে (জোট) ভোটের সংখ্যায় রূপান্তরিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কিন্তু জোট ভোটসর্বস্ব জোট না, এটা ইলেকশন অ্যালায়েন্স না। ইলেকশনটা আমাদের সামগ্রিক আন্দোলনের একটা অংশ।”
“আন্দোলনের স্বার্থে ভোটে আমরা অংশগ্রহণ করতে পারি, বয়কটও করতে পারি,” বলেন দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী সিপিবির সভাপতি।
দুই যুগ আগে বাংলাদেশের বাম দলগুলো পশ্চিমবাংলার আদলে যে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠন করেছিল, তা অকার্যকর হয়ে পড়ার মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে গিয়ে ভেড়ে।
নতুন জোটে ওই দলগুলোকে আহ্বান করা হবে না বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান সেলিম।
তিনি বলেন, “প্রকৃত বামপন্থিরা রাজপথে নামলে পড়ে আমাদের সঙ্গে মিলিতভাবে আমাদের এই জোটকে আরও সম্প্রসারণ করব। কিন্তু যারা শাসক শ্রেণির সঙ্গে, এই ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা আমাদের এই চিন্তা বা আহ্বানের আওতাভুক্ত না। আমাদের লড়াই তাদের বিরুদ্ধেও।”
রাশেদ খান মেনন নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেরিয়ে আলাদা দল গঠনকারী সাইফুল হক নতুন জোটের সমন্বয়ক হিসেবে তিনটি কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এগুলো হল- ‘দুঃশাসন, জুলুম, দুর্নীতি-লুটপাটতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্র’ প্রতিরোধে ২৪ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ। ‘ভোটাধিকার নিশ্চিত’ করার দাবিতে ৪ অগাস্ট মতবিনিময় সভা। ছয়টি বিভাগীয় শহরে সভা, সমাবেশ ও মিছিল ও ১০ ও ১১ অগাস্ট।
সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
জোট পরিচালনা পদ্ধতির বিষয়ে সাইফুল হক বলেন, “জোটে একজন সমন্বয়ক থাকবেন। প্রতিটি দল থেকে দুজন প্রতিনিধি নিয়ে জোটের কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠিত হবে। শরিক দলগুলো থেকে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে তিন মাসের জন্য একজন সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন’ সম্ভবপর নয় ।
নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলে তিনি বলেন, “প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ কর্তৃত্ব ব্যবস্থা চালু করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের পর সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি বিএনপিও জানিয়ে আসছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তা আর ফেরত আসবে না, নির্বাচিত সরকারের অধীনেই ভোট হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এক সময়ের জোটসঙ্গী সিপিবির সভাপতি সেলিম বলেন, “এই কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
“সুতরাং পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচনকালে যাতে প্রকৃত নিরপেক্ষ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন উভয়ের ক্ষেত্রে যাতে নিরপেক্ষ কর্তৃত্ব এই দেশের ওপরে থাকে সেই জন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও সেই ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে।”
বাম দলগুলো বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার চায় জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করতে চাই। টাকার খেলা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি থেকে নির্বাচনকে মুক্ত করতে চাই।”
নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের জামানতের অর্থ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করলে তা গরিবদের ‘স্বার্থবিরোধী’ সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করেন সিপিবি সভাপতি।
তিনি বলেন, “কমিশন এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা গরিব মানুষের স্বার্থবিরোধী, গরিবদের প্রার্থী হওয়া থেকে বঞ্চিত করার পদক্ষেপ হবে। তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব কি না, সেই বিষয়ে ১০০ বার ভেবে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”