সরকারের ধারাবাহিকতা চায় জাতীয় পার্টি: তাজুল

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির নেতা তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা চায় তার দল।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2018, 06:27 PM
Updated : 23 June 2018, 06:32 PM

তবে একইসঙ্গে সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘অবদানের’ স্বীকৃতি চেয়েছেন তিনি।

শনিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাজুল বলেন, “আমরা ধারাবাহিকতা চাই। সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে বলি। এর বিরুদ্ধে ওর বিরুদ্ধে না বলে একসাথে কাজ করি।”

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ‘বঞ্চিত’ হচ্ছেন অভিযোগ করে কুড়িগ্রামের এই সংসদ সদস্য বলেন, “আপনারা উন্নয়ন করছেন। কিন্তু এরশাদ সাহেবেরটা স্বীকার করেন না কেন?

“আমরা জাতীয় পার্টির এমপিরা বঞ্চিত। কোনও অবস্থাতে কিছু পাচ্ছি না।”

আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণে সরকারের ‘ব্যর্থতার’ সমালোচনাও করেন তাজুল ইসলাম।

তাজুল ইসলাম চৌধুরী

তিনি বলেন, “শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকারের মাথাব্যাথা নেই। শেয়ার বাজারে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করার জন্য সরকারের কার্যক্রম নেই।”

দুই দিন ধরে গ্রামে বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এত বিদ্যুৎ কোথায় গেল? কেন আমরা সুবিধা পাব না?

“বাজেটে কোথা থেকে কী আসবে তা বলা হচ্ছে না। গ্রামে ডাক্তার নেই। সমস্ত ঢাকায় বসে আছে। জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিলেন সেখানে ডাক্তার নেই।”

আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগকে সতর্ক করেছেন জোট শরিক জাসদের জ্যেষ্ঠ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদল।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “সংসদে একটা রোগ দেখছি- আত্মতুষ্টি। এটা বিপদ ঘটাতে পারে। আমরা তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছি, এটা বিশ্বের সংসদীয় রাজনীতিতে বিরল।

“সংসদীয় রাজনীতিতে ১৫ বছর একটানা থাকা অসম্ভব। আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না। অসম্ভব আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখীন হন।”

দেশের শিক্ষার মান নিয়ে সমালোচনা করে বাদল বলেন, “লেখাপড়ার মান নিয়ে অর্থমন্ত্রীর শব্দটা নিলাম-রাবিশ। মেধাবী ছেলে-মেয়েরা বাইরে থেকে কীভাবে ফিরবে দ্রুত ব্যবস্থা করেন।”

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি।  

জাসদের একাংশের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এই জাসদ নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী প্রতিরক্ষার জন্য যা করেছেন তা অকল্পনীয়। অন্য সময় হলে সমালোচনা করতাম- যে মাসল প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় না, সেখানে খরচ করব কেন?

“দক্ষিণ থেকে সমস্যা আসবে। দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম দেশ। সে রকম আচরণ করেন। শেখ হাসিনা বিদেশে উন্নত মস্তকে হাঁটেন। তথাকথিত মিয়ানমারকে জবাব দিতে হবে। প্রতিরক্ষায় কোর কম্পিটেন্সি আনতে হবে।”

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের পথে দেশ এগিয়ে চলেছে।

“সে দিন বেশি দূরে নয় বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হবে।”

বাজেট নিয়ে তোফায়েল বলেন, “সরকার গণমুখী বাজেট দিয়েছে। সব মানুষ এর সুবিধা ভোগ করবে।”

বাজেটে ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প রক্ষা করার ব্যাপারে দুই-একটা ব্যত্যয় আছে’ মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন; প্রধানমন্ত্রীকেও অনুরোধ করেছেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ শুধু মধ্যম আয়ের দেশ হবে না। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে, কিন্তু ইতোমধ্যে সরকার জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আলোচনা শুরু করেছে।

“বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এফটিএ অর্থাৎ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করা হচ্ছে। সব দিক থেকেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।”

স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অর্জন তুলে ধরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, “আওয়ামী লীগ-বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ-শেখ হাসিনা এর বাইরে বাংলাদেশের কোনো অর্জন নেই। জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের যত অর্জন সবই আওয়ামী লীগ-বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে।”

তিনি বলেন, “২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আওয়ামী লীগের আদর্শ, লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিরূপন করা হয়েছে। জনগণের ওপর কোনো বাড়তি কর চাপানো হয়নি। নিত্যপণ্যে বাড়তি শুল্কারোপ হয়নি।” 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন, যারা সব সময় একই আদর্শ ও অবস্থানে আছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের এত আস্থা।

“আওয়ামী লীগ পাকিস্তান আমলে ইয়াহিয়া আর স্বাধীনতার পর ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া ও এরশাদের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিল। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময় বিশ্বাস করে নির্বাচন ছাড়া রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া যায় না।”

মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু দাবি দাওয়া বাজেটে আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ‘সম্মানজনকভাবে’ বাড়ানো এবং স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ ভাতা দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাজেট আলোচনা আরও অংশ নেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, নুরুল ইসলাম সুজন, নজরুল ইসলাম বাবু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রমুখ।