অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সম্ভাবনার কথা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে একদিন পর বৃহস্পতিবার এক সভায় বিএনপি মহাসচিব এরকম অভিযোগ তুলেন।
তিনি বলেন, “কাল বলছেন যে হয়ে যাবে, আমাদের নির্বাচনের অন্তর্বতীকালীন সরকার, টরকার। বিএনপি না আসলে কি নির্বাচন থেমে থাকবে? এটাই তো তারা চায়। বিএনপি না আসুক, অন্যান্য দলগুলো দুই একটা যেটা আনা হয়েছে, তারা আসুক।
“গণতান্ত্রিক দল হিসেবে অবশ্যই আমরা নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনটা অবশ্যই হতে হবে নির্বাচনের মতো। আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন, হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াবেন। বিরোধী দলকে একটা কথাও বলতে দেবে না, ধরে ধরে জেলে পুরবেন। সেক্ষেত্রে তো নির্বাচন হবে না।”
নির্বাচনের সমান্তরাল মাঠ তৈরি করতে হবে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কৃতি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে- এটার কোনো বিকল্প নাই। সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
“সবার আগে গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।”
বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। অক্টোবর মাসে সম্ভাবনা বেশি।”
সংবিধান অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে হবে। সেই হিসাবে, আগামী নির্বাচন হতে হবে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে। সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনকালীন সরকার আকারে ছোট হবে জানিয়ে কাদের বলেন, “এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তখন মন্ত্রিসভা ছোট হবে, তখন ঢাউস মন্ত্রিসভার প্রয়োজন নেই। মেজর কোনো পলিসি বা ডিসিশন নিতে পারবে না, সেই সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে।”
দশম সংসদ নির্বাচনের সময় যে সরকার গঠন করা হয়েছিল, তাতে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল অন্য দলগুলোকে স্থান দেওয়া হয়েছিল। বিএনপিকে তখন প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা তা গ্রহণ করেনি।
বিএনপি নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে তাদের। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছে তারা।
জাতীয় ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বিএনপি সমর্থিত ফোডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলে সভায় অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
একদলীয় বাকশাল থেকে বর্তমান অবস্থা ‘আরো ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সস্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে শুধুমাত্র আদালতকে ব্যবহার করে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।”
সাংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার অভাব আছে মন্তব্য করে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, “যেমন ধরুন কাজের ক্ষেত্রে কোনো কোনো স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশ করা যাবে না। যেটা আমরা বিডিনিউজের ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি।’’
“... বিডিনিউজ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের অবস্থা। এরকম সংবাদ মাধ্যম থাকলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ। তারা প্রকৃত তথ্য জানতে পারে না। তারা চতুর্থ স্টেটের দায়িত্ব পালন করতে পারে না।”
সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “১৯৭৮ সাল থেকে এই দিবসটি সাংবাদিক সমাজ পালন করে আসছে। আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকরা প্রতিদিনই কালো দিবস পালন করছি।
“চ্যালেন ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি বন্ধ করা হয়েছে, অসংখ্য প্রোগ্রাম, অসংখ্য পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে। সাগর-রুনিসহ এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। একটিরও বিচার হয়নি। মিডিয়া কনট্রোল করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না।
“আমাদের অবশ্যই মাঠে নামতে হবে, প্রতিবাদ জানাতে হবে, সব বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হবে। নইলে মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকবে না।”
ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইরফানুল হক নাহিদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের সহ সভাপতি মোদাবেবর হোসেন, প্রচার সম্পাদক আহমেদ মতিউর রহমান, ডিইউজের সহ সভাপতি বাসির জামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম সভায় বক্তব্য দেন।