মাদকের পরে আসছে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান: মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের পর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলবে, যাতে ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশে ভয়ের সংস্কৃতি চালুর চেষ্টা হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2018, 03:33 PM
Updated : 27 May 2018, 04:02 PM

আর এই রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে ক্ষমতাসীনদের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

রোববার নাগরিক ঐক্যের ইফতার মাহফিলে মান্নার পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার এই নেতাদের সবাই নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। দেশে গুম, খুন, নির্যাতন চলছে অভিযোগ করে এখনই রাজপথে নামার কথা বলেছেন তারা।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে গণতন্ত্রকে যেভাবে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, মানুষের অধিকারগুলোকে যেভাবে হরণ করা হয়েছে তাতে  আজকে আমরা কেউ নিরাপদ নই। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি তাহলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে সংকট উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে গিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

“আজকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এই জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য আমি সকল দলের প্রতি, সকল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিকল্প ধারার সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীও মনে করেন ‘বাংলাদেশের মুক্তির’ জন্য নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

সরকারের বিরুদ্ধে এখনই রাস্তায় নামা উচিত বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা। তিনি বলেন, “হাজার হাজার মানুষ জেলের ভেতরে আছে। কতদিন চলবে এগুলো? আমরা আর সহ্য করতে রাজি না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। এই জাগরণের সাথে আমরা থাকব।”

‘ভয় থেকে’ খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি বলতে চাই, এখন যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটি কোনো ব্যক্তি, কোনো দলের নয়, এটি দেশ ও সমগ্র জাতির।

“নির্বাচনের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত না লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের যে দাবিগুলো রয়েছে যে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন এবং সংসদকে ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন হতে হবে; ততক্ষণ পর্যন্ত দেশে কোনো অর্থবহ নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না। “

খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশে নির্বাচনের চিন্তা করাও ‘ঠিক হবে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সরকারের ‘দুর্নীতি-অপশাসনের’ বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে  জেএসডি সভাপতি রব বলেন, “আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি, পতাকা উড়িয়েছি, জাতীয় সঙ্গীত দিয়েছি, বঙ্গবন্ধু সৃষ্টি করেছি। এভাবে দেশ আর চলতে দেওয়া ‍যায় না।

“জনগণকে নিয়ে আমরা রুখব এই স্বৈরাচার।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না বলেন, “দেশে এখন একটা নির্মমতার চাষ হচ্ছে, ভয়ের সংস্কৃতি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন, এখন মাদক নিয়ে অভিযান হচ্ছে, এরপরে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটবে। আরও কিছু ঘটনা চলতেই থাকে। এ রকম অভিযান ও ক্রসফায়ার-মৃত্যর মহড়া চলবে। এর মধ্যে নাকি ভোট সাজাবার ব্যবস্থা করা হবে।”

দেশে এই অবস্থায় নিজেদের মধ্যে ‘যত সব ছোট-খাটো’ সমস্যা আছে তা ভুলে যাওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি।

“এ রকম পাখির মতো করে যখন মানুষ মারছে তখন সকলে আমরা যাতে বেঁচে থাকতে পারি, মানুষের মতো স্বাভাবিক মৃত্যুর নিরাপত্তা পাই সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও এই ইফতারে আমন্ত্রণ জানানোর কথা উল্লেখ করে মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বিচারবহির্ভূত’ হত্যার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, কাউকে ছাড়ব না। যদি প্রমাণ পাই সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

“এই ৬৪টা লোককে গুলি করে মেরেছে, প্রথম দাবি করছি তাদের নাম-ঠিকানা পত্র-পত্রিকা-মিডিয়ায় প্রকাশ করা হোক, এদের নামে কী কী অভিযোগ আছে তা বলা হোক, তাদের নামে কী কী মামলা আছে তা বলা হোক। এসব মামলার কী কী প্রমাণ আছে সেটাও বলা হোক।”

ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “প্রমাণ ছাড়া যদি বদির (সাংসদ আব্দুর রহমান বদি) চুলও ধরা না যায় তাহলে প্রমাণ ছাড়া ৬৪ জনকে যে হত্যা করেছেন অপেক্ষা করেন দিন আসবে এই রোজার মাসে মধ্যে আমি বলি-কাউকে ছাড়ব না।

“এদের সমস্ত অন্যায়ের জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আপনারা গুলি করে মারবেন, আমরা গুলি করে হত্যার নীতিতে বিশ্বাস করি না কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”

রাজধানীর তোপখানা রোডের  এশিয়া হোটেল অ্যান্ড  রিসোর্টে  নবগঠিত ‘যুক্তফ্রন্ট’র অন্যতম শরিক নাগরিক ঐক্য এই ইফতার মাহফিলের  আয়োজন করে।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিকল্পধারার অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠিত হয়।  এই জোটে বিকল্পধারা ও নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক  সাইফুল হক, বিকল্পধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা  এসএম আকরাম, সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ছিলেন।  

বিএনপির শামা ওবায়েদ, শায়রুল কবির খান, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপির  মনজুর হোসেন ঈসা, জাতীয় পার্টির এম এ মুকিত, সোনার বাংলা পার্টির শেখ আবদুর নূর, নাগরিক ঐক্যের ফজলুল হক সরকার, মোমিনুল ইসলাম, জিল্লুর চৌধুরী, মাহবুব মুকুল, খন্দকার সেলিম, আতিকুর রহমান, জাহেদ-উর-রহমান ও  প্রয়াত রাজনীতিক মশিয়ুর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে রিটা রহমানসহ নেতৃবৃন্দ ইফতারে অংশ নেন।