কেউ না এলে ‘একাই রাস্তায় নামবেন’ কামাল হোসেন

দেশে ‘পাইকারি হারে লুটপাট’ চলছে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2018, 04:47 PM
Updated : 20 April 2018, 04:47 PM

শুক্রবার বিকালে এক নাগরিক সংলাপে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমরা এভাবে দেশকে আর দেউলিয়া হতে দিতে পারি না।

“আমি অন্তত নিষ্ক্রিয় থাকব না। আমি একা হলেও গুলিস্তানে সামনে গিয়ে বলব, এই দেশকে এভাবে দেউলিয়া করা যাবে না।”

কামাল হোসেন বলেন, “এই যে পাইকারি লুটপাট হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে, বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকাগুলো ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

দুর্নীতিবাজদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা চুরি-চামারি করেছেন আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা চলে যান। দ্রুত ক্ষমা থেকে মুক্ত হোন, আমরা বাঁচি। বিদেশে যেসব টাকা পয়সা রেখেছেন আপনারা ভালোভাবে ভোগ করেন। আমি আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করি, দীর্ঘায়ু কামনা করি।”

জনগণের অর্থ লুটপাটকারীদের হুঁশিয়ার করে কামাল হোসেন বলেন, “চুরির পর চুরি করতে থাকবেন আর নীরব দর্শক হয়ে ভয়ে দেখতে থাকব-এটা হবে না। আমরা ভীত হয়ে এদেশকে দেউলিয়া হতে দিতে পারি না। এটা করে কেউ পার পেতে পারে না।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি ইঙ্গিত করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “আমি আমার দীর্ঘ জীবনে দেখেছি প্রত্যেক স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে। আমি আজ গর্ব করে বলতে পারি, বাংলাদেশে কোনো স্বৈরাচার চিরস্থায়ী হতে পারে না, পারবে না।

“তাই সময় থাকতে সুন্দরভাবে জনগণকে ক্ষমতা গ্রহণ করার ব্যবস্থা করুন। সত্যিকার অর্থে যে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। জনগণকে বলব, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করি।”

সভায় বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, “দেশে লুটপাট চলছে, সন্ত্রাস চলছে। দুর্নীতি দেশটা গ্রাস করেছে। দেশে মানবাধিকার নিচের দিকে যাচ্ছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব কতটুকু বিপন্ন বুঝতে হবে।

“এই থেকে আমাদের দেশকে উদ্ধার করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্রকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে।”

ক্ষমতাসীন দল সভা-সমাবেশ করতে পারলেও বিরোধী দলকে জনসভা করতে না দেওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, “ব্যক্তিপূজার রাজনীতি চলবে না। আমরা রক্ত দিয়ে নির্বাচন আনব, আর নির্বাচনের পর তিনি বসে যাবেন, তিনি সব, জনগণ কিছু না-এই মন-মানসিকতার রাজনীতি চলবে না।

“গণতান্ত্রিক রাজনীতি হবে, শাসনতন্ত্র মাফিক দেশ চালাতে হবে, মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলতে হবে। আজকে সরকারি কর্মচারীরা মনে করে, তারা সরকারের সেবক, জনসেবা তাদের দায়িত্ব না-এটা লজ্জার কথা।”

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি গতকালকে বলেছিলাম, খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা তসরুপের দায়ে যিনি জেলে দিয়েছেন সেই বিচারকেরও হাই কোর্টে বিচার হতে পারে। ড. কামাল হোসেন যে সংবিধান রচনা করেছেন, সেই সংবিধান যদি সত্যিকার অর্থে কার্যকরী হয় তাহলে আজকে ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সাক্ষী রেখে বলছি, এই বিচারকের অবশ্যই বিচার হবে।

“কারণ ওই টাকা তসরুপ হয় নাই, ওই টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। কোনো ট্রাস্টের টাকা ব্যবহার করা হয় নাই। খালেদা জিয়াকে এই মামলায় আসামি করাই চলে না। আমি খালেদা জিয়ার পক্ষের লোক না, আমি আইনের পক্ষের মানুষ।”

কামাল হোসেনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’র ব্যানারে ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বিধৃত আকাঙ্ক্ষা. বিদ্যমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপ হয়। বক্তারা কামাল হোসেনের দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য প্রকৌশলী শেখ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বাসদের খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বিকল্পধারার অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান, সাবেক সাংসদ সুলতান মো. মনুসর, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য আ ব ম মোস্তফা আমিন, জেলা সমন্বয়কারী মো. হাবিবুর রহমান, যুব ঐক্য প্রক্রিয়ার মো. হানিফ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।