স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা বিএসএমএমইউতে

বন্দি হওয়ার দুই মাস পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কারাগার থেকে বের হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া; গেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2018, 05:25 AM
Updated : 7 April 2018, 07:53 AM

শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কারাগার থেকে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে বের করা হয় তাকে।

পুলিশের ওই গাড়ির সামনে পেছনে ছিল একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং আরও দুটি গাড়ি। আগে-পিছে ছিল র‌্যাবের পাহারা।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাড়ে ১১টার কিছু সময় পরই বিএসএমএমএইতে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সাদার উপর কালো প্রিন্টের সুতি শাড়ি পরা খালেদা হেঁটেই নামেন গাড়ি থেকে, ওঠেন কেবিন ব্লকের লিফটে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে থাকা গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে দেখা যায়নি।

খালেদা জিয়া ৫১২ নম্বর কেবিনে থাকবেন বলে বিএসএমএমইউর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করা হবে। সেজন্য হাসপাতালে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে এক্সরে কক্ষ নং ১/এ এবং কেবিন ব্লকে প্যাথলজি বিভাগে রক্ত পরীক্ষার করার কক্ষ প্রস্তত রাখা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে পাহারা দিয়ে আসা ঢাকার যুগ্ম পুলিশ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম সাংবাদিকেদর বলেন, “আমাদের দায়িত্ব ছিল উনাকে নিরাপদে হাসাপাতালে পৌঁছে দেওয়া। তা আমরা করেছি।

“স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর উনাকে পুনরায় কারাগারে পৌঁছে দিতে হবে, আমার কাছে এটুকু তথ্য রয়েছে।”

খালেদা জিয়াকে আনার সময় শাহবাগে বিক্ষোভ করছিলেন বিএনপির একদল নেতা-কর্মী। বিএসএমএমইউর ফটক থেকে পাঁচজনকে পুলিশ আটক করেছে।

কারা কর্তৃপক্ষের আবেদনে খালেদার জন্য বিএসএমএমইউতে একটি কেবিন তৈরি রাখার কথা সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিডিনিউজ টোয়ে ন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন বিএসএমএমইউর কোষাধ্যক্ষ আলী আসগর মোড়ল।

তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে আলী আসগর বলেন, “সেটা মেডিকেল বোর্ড ঠিক করবে।”

৭৩ বছর বয়সী খালেদার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. শামসুজ্জামান। বোর্ডে সদস্য রয়েছেন ডা. মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

এই মেডিকেল বোর্ড গত সপ্তাহে কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখে এসে জানিয়েছিল, তার অসুস্থতা গুরুতর নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। সেজন্য তাকে নিয়মিত নানা রকম ওষুধ খেতে হয়।

দুই মাস আগে কারাবন্দি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে দেখতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়নি। 

বিএনপি তাদের নেত্রী খালেদার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডকে ‘লোক দেখানো’ বলেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির নেতা মওদুদ আহমদ।

শুক্রবার বিকালে দলীয় নেত্রীকে দেখে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো নয়। তার আর্থরাইটিসের সমস্যা বেশ বেড়ে গেছে। তার হাঁটতেও কষ্ট হয়। যেটাকে কিছুটা স্নায়ুবিক সমস্যা বলা হয়, সেটাও দেখা দিয়েছে। সত্যিকার অর্থেই তিনি কিছুটা স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছেন।”

বিএনপি মহাসচিব তার নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কারাগারে যাওয়ার অনুমতি চাইছেন।

“আমরা মনে করি, যারা তার নিয়মিত চিকিৎসা করেন, তাদেরকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হোক এবং যে চিকিৎসা দরকার, অবিলম্বে তা দেওয়া হোক।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাগারে রয়েছেন।

তিনি আপিল করে জামিনের আবেদন জানালেও তার শুনানি মে মাসে নির্ধারিত রয়েছে। ফলে তার আগে তার কারামুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই।