শুধু ফেইসবুকে নয়, রাজপথে সোচ্চার হতে হবে: ফখরুল

দেশের ‘সঙ্কট’ উত্তরণে শুধু ফেইসবুকে নয়, যুব সমাজকে রাজপথেও সোচ্চার হতে বললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2018, 10:50 AM
Updated : 21 April 2018, 03:13 PM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “দেশে এখন দুঃসময়। তরুণদের, যুবককে বলছি- শুধু ফেইসবুক দেখলে চলবে না, শুধু সোশাল মিডিয়ায় দুই-একটা কথা বললেই চলবে না।  রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে, দেশকে রক্ষা করতে হলে, রাজনীতিকে রক্ষা করতে হলে রাস্তায় সোচ্চার হতে হবে, প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে।”

দেশের যুব সমাজকে ‘উঠে দাঁড়িয়ে’ নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে বলেন এই বিএনপি নেতা।

২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই আলোচনা সভা হয়।

বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য সরকার ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “কত নাটক সাজায়। দেখেন ওরা (সরকার) মনের দিক থেকে কত দুর্বল, কত দেউলিয়া যে দল ভাঙার চেষ্টা…। সমস্ত সোশাল মিডিয়াতে এরা মিথ্যা লেখে। এই মিথ্যা কথা বলে দলের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করতে চায়।”

সুন্দরবন নিয়ে উদ্বেগ

সুন্দরবনের কাছে সরকারের ১৯০টি শিল্প স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার খবর নিয়েও এ অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরবন এমন একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা যা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে রক্ষা করে। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এই সুন্দরবনকে ধ্বংস করে ফেলার প্রক্রিয়া হিসেবে ইতিমধ্যে ১৯০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিটের লাইসন্স দিয়েছে। সেটা সুন্দরবনকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলবে।”

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের বক্তব্যের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, “এই ধরনের ফরেস্টের কাছে যদি কোনো শিল্প তৈরি হয়, সেখান থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে আসবে, তাতে এই বন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা উদ্বিগ্ন সুন্দরবন নিয়ে।”

সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচনা হলেও সরকার তা ‘কানে নিচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “তার (সরকার) কাছে এই দেশের কোনো মূল্য নেই। তাদের একটাই ইচ্ছা- ক্ষমতায় টিকে থাকা।”

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রসঙ্গ

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, দেশের মানুষের অর্থে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের স্বত্ত্ব সরকার তাদের ‘কাছের মানুষদের’ দিয়ে দিয়েছে।

“প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্রান্স থেকে সেটা তৈরি করা হয়েছে। উৎক্ষেপণ করা হবে। সেটার স্বত্ত্ব একদম কাছের মানুষদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা কিছু করবেন, তাদেরকে পয়সা দিয়ে করতে হবে। ভালো করে একটু খোঁজ-খবর নেন সাংবাদিক ভাইয়েরা। এই কথা এখন বাজারে চলে এসেছে।”

সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সমস্ত ব্যাংকগুলো তাদের নিজেদের লোকজনদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বড় বড় কনট্রাক্টস- সব তাদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পদ্মাসেতুর খরচ আট হাজার কোটি টাকা থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা কী তা আপনারা জানেন।”

রোহিঙ্গা সঙ্কট

সরকারের ‘ভ্রান্তনীতির কারণে’ রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “দেশের জন্য অশনি সংকেত। সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। পত্রিকায় এসেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন, কোনো অগ্রগতি নেই। একটা লোককেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।”

জার্মানির এক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে স্বৈরাচারি শাসনে থাকা দেশের তালিকায় রাখার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, সেখানেই ‘সরকারের স্বরূপ’ উন্মেচিত হয়েছে।

জাগপা সভাপতি অধ্যাপক রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, মাস্টার এম এ মান্নান, আবিদুর রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আসাদুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।