মুক্তি একদিন বিলম্বে খালেদার জনপ্রিয়তা দ্বিগুণ হচ্ছে: মওদুদ

উচ্চ আদালত জামিন দেওয়ার পরও খালেদা জিয়া মুক্তি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হলেও এতে একদিক থেকে দলের লাভ দেখছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 03:13 PM
Updated : 13 March 2018, 06:45 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি একদিন বিলম্বের জন্য বাংলাদেশে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে দ্বিগুন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেওয়া মওদুদ মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বলেন, “আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হয়ে গেল। আমরা আশা করেছিলাম যে, উনি আজকে অথবা কালকের মধ্যে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। তো ঠিক আছে তাদের (সরকার) অধিকার আছে আপিল করার। তারা আজকে আপিল করতে গিয়েছিলেন, তারা সময় চেয়েছেন। আমরা বলেছি, কালকে ফুল বেঞ্চে শুনানি হবে।”

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ের পর থেকে গত ৩২ দিন ধরে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। নিম্ন আদালত থেকে ওই মামলার নথি হাই কোর্টে আসার পর তা দেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তাকে চার মাসের জামিন দেয়।

এই জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে আবেদন করা হলে তিনি কোনো আদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। 

বুধবার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হবে আশা প্রকাশ করে মওদুদ আহমদ বলেন, “এই যে বিচারিক প্রক্রিয়া, এই প্রক্রিয়ায় ‍উচ্চতম আদালত হাই কোর্টের জামিনের রায় বহাল রাখবেন- এটাতে আমাদের মনে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বিষয় হলো এই যে ১৫ দিন বিলম্ব হল। এটা তো আদালত করে নাই, সরকার করেছে, সরকারি কর্মচারীরা করেছে, যারা এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “একটা কথা আমি বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি একদিনের জন্য বিলম্বিত হলে তার জনপ্রিয়তা দ্বিগুন বাড়বে বাংলাদেশে। বিলম্ব করতে চান? করেন। আমার নেত্রীর কষ্ট হবে ঠিকই, কিন্তু তার জনপ্রিয়তা আপনারা ঠেকাতে পারবেন না।”

সরকার নিম্ন আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বে ‘কলাকৌশল’ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নিম্ন আদালত কিন্তু এখন সুপ্রিম কোর্টের অধীনে নাই, এটা চলে গেছে নির্বাহী বিভাগের অধীনে। এই যে দেখেন কুমিল্লার মামলায় ওয়ারেন্ট। এতদিন চলছে ওয়ারেন্ট ইস্যু নেই। এখন যেহেতু উচ্চ আদালতে উনি (খালেদা জিয়া) জামিন পেয়ে গেছেন এখন ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য ২৮ মার্চ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যেন জেলখানায় থাকে, তার ব্যবস্থা করা। এটা হীনমন্যতা ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু লাভ হবে না তাতে।”

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

যতই কলা-কৌশল, ছল-চাতুরি, ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন খালেদা জিয়াকে আটকে রাখা যাবে না মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে আমাদের কাছে আবার ফিরে আসবেন।”

তিনি বলেন, “উনার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে এখন যত মামলা আছে সব স্থগিত আছে, নিয়ন্ত্রণে আছে। চারটা মামলা- দুইটা ঢাকায়, একটা নড়াইল এবং একটা কুমিল্লায়।”

জিয়া পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল সাজানো ও মিথ্যা মামলার রাজনৈতিক তাৎপর্য ও আমাদের করণীয়’ শিরোনামে এই আলোচনা সভা হয়।

মওদুদ আহমদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাকে সাথে নিয়েই আমরা নির্বাচন করব এবং সেই নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।

“সেই নির্বাচনে যে ধানের শীষের পক্ষে জোয়ার উঠবে, দেশের মানুষ যখন উনার (খালেদা জিয়া) পক্ষে মাঠে নেমে যাবে তখন বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র পাল্টে যাবে। আপনারা ধৈর্য্য ধরেন, কেউ হতাশ হবে না।”

ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতি করে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহিল মাসুদের পরিচালনায় অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক এসএম হাসান তালুকদার, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, প্রকৌশলী রুহুল আলম, শহীদুল ইসলাম শহীদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।