রায়ের ১১ দিন পর সোমবার সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়ে রাতেই খালেদার আইনজীবীরা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর ধানমণ্ডির চেম্বারে জরুরি বৈঠকে বসেন।
এরপর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে এক দফা বৈঠক করে বেলা সাড়ে ১২টা থেকে একই স্থানে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসেছেন তারা।
বিএনপিনেত্রীর জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত রয়েছেন এ বৈঠকে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
সকালে প্রথম দফা বৈঠকের পর জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “এ মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। এতবড় একটি জাজমেন্ট, সেই জাজমেন্ট পড়ে সেখান থেকে পয়েন্ট তৈরি, আপিলের গ্রাউন্ড তৈরি করতে সময়তো লাগবেই।… এত বড় জাজমেন্ট নরমালি আমরা কখনও দেখি না।”
তবে আপিল আবেদন মঙ্গলবারই জমা দেওয়া হবে কি না- সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেননি এই আইনজীবী।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ অপর পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছরের জেল ও জরিমানা করা হয়েছে রায়ে।
রায়ের দিন বিচারক বলেছিলেন, তার পুরো রায় ৬৩২ পৃষ্ঠার। সেদিন তিনি এর সারসংক্ষেপ আদালতে পড়ে শোনান। সোমবার বিকাল ৪টার দিকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলে দেখা যায়, তা হাজারের বেশি পৃষ্ঠার।
রায়ে বলা হয়, সরকারি এতিম তহবিলের টাকা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় না করে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়াসহ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার আসামিরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধ করেছেন।
খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল বলেন, “রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দেখেছি, তার মধ্যে যে যে কথাগুলো এসেছে, আমরা মনে করি সাক্ষ্য-প্রমাণ, কাগজপত্রের সঙ্গে তার মিল নেই; এবং সেগুলো অসত্য।”
এদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপিল করা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
সোমবার রাতে এ জে মোহাম্মদ আলীর চেম্বারে আপিল করার বিষয়ে যে বৈঠক হয়, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন আইনজীবী অনুপস্থিত ছিলেন। তবে আইনজীবীদের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে তাদের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
হাই কোর্টের কোন বেঞ্চে এই আপিল দাখিল করা হবে তা নিয়েও খালেদার আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বিএনপিপন্থি এক আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খুব সম্ভবত বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চে আপিল শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হতে পারে।”