ঢাকায় যাতে আন্দোলন হয় সে ব্যবস্থা নিতে তারা দলীয় চেয়ারপারসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খালেদা জিয়াও কেন্দ্রের নেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘বেঈমানি’ করলে আর ক্ষমা হবে না।
শনিবার ঢাকার লো মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাড়ে চারশ’র বেশি নেতার সঙ্গে এই বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায় সামনে রেখে সারা দেশের নেতাদের নিয়ে এই সভায় তিনি ‘যে কোনো বিপদে’ এবং সুখের দিনেও সবার পাশে থাকার কথা বলেছেন।
পরে পাঁচ তারকা ওই হোটেলের ১৪ তলায় গ্র্যান্ড বলরুমে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে তৃণমূলের ৪২ জন নেতা বক্তব্য দেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পেরেছে, রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন তৃণমূলের নেতারা কর্মসূচি চেয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে এবং ওই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকার নেতাদের রাস্তায় না নামাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন তারা।
নোয়াখালীর একজন নেতা বলেন, দেখা গেছে ঢাকায় কোনো আন্দোলন হয় না। ঢাকার নেতারা ‘চুপ করে’ বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে খালাস। কিন্তু ‘ম্যাডাম’ নির্দেশ দিলে মফস্বলের নেতাকর্মীরা ‘সব কিছু অচল’ করে দিতে পারে।
দলের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক কুমিল্লার নেতা হাজি ইয়াসিন আলী পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকায় কী হবে জানি না। ঢাকার দিকে আমরা তাকিয়েও থাকতে চাই না।”
৮ ফেব্রুয়ারি ‘অন্যায়ভাবে কিছু হলে’ সারা দেশে ৩০০ আসনের সাবেক এমপি এবং ভবিষ্যতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ নিজ এলাকায় ১০ হাজার মানুষ নিয়ে রাজপথে অবস্থানের প্রস্তাব বৈঠকে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরিশালের নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার বলেন, ‘যেনতেনভাবে মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিলে দলের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে ‘শক্ত কর্মসূচি’ দিতে হবে; আর প্রস্তুতি নিতে হবে সেভাবেই।
কিশোরগঞ্জের এক নেতা বলেন, ‘প্রহসনের’ মামলায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর দলের শিশু বিষয়ক সম্পাদক টাঙ্গাইলের নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “৮ তারিখ কী রায় হবে সেটা সরকার জানে। তবে আমরা জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকব। আমাদের নেত্রী জেলে গেলে আমরা বাইরে থাকব না, আমরাও জেলে যাব।”
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক লালমনিরহাটের নেতা আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “আমরা মনে করি, ৮ তারিখ যদি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক রায় দেয়া হয়, তাহলে সবাই রাজপথে নামব যাতে কোনো ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে না পারে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে নব্বইয়ের পর প্রথম সংসদের বাইরে চলে আসে বিএনপি। এই বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন্ নিয়ে এখন রাজনৈতিক উত্তাপ চলছে।
সে রকম কিছু হলে রাজপথে ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের মাধ্যমে এর ফয়সালা করার ঘোষণা দিলেও তৃণমূল নেতাদের মতো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কথাতেও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের প্রতি আস্থার সংকটের প্রকাশ ঘটেছে।
কয়েক দিন আগেই নেতাদের পেছনে নিজস্ব গোয়েন্দা লাগানোর কথা বলেছিলেন খালেদা। আর শনিবার বললেন, “যারা বেঈমানি করবে, যারা এদিক-ওদিক, এক পা এদিক অন্য পা অন্য দিকে রাখবে, তাদের চিহ্নিত করা হবে।
“এদের মূল্যায়নের জায়গা থাকবে না। এদের তারাও (সরকার) নেবে না, আমরাও নেব না। আমরা আগে একবার ক্ষমা করেছি, ক্ষমা বার বার হয় না।”
সভার শুরুর এই সতর্ক বার্তা সমাপনীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যেও দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
নেতাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা হঠকারী কোনো কিছুতে পা দেবেন না, দলকে বিপদে ফেলার মতো কিছু করবেন না। সবাই একতাবদ্ধ থাকবেন।”
শনিবার বৈঠকে কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “না, কোনো কর্মসূচি ঠিক হয়নি। যে কর্মসূচি হবে তা হবে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা হলে আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির সাংবাদিকদের বলেন, “একটা প্রহসনমূলক মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে যদি কনভিকশন দেয় তাহলে দেশের জনগণ তা মানবে না। সেটার জন্য যেটা করতে হবে, সেটাই আমরা করব।অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে।”
দল ‘অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ’ দাবি করে তিনি বলেন, “যত ষড়যন্ত্র হোক না কেন আমরা এক থাকব। ম্যাডাম যেখানেই থাকুক তিনি দলের নেতৃত্ব দেবেন।”
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে খালেদা জিয়া যখন সভার ইতি টানেন, তখন লো মেরিডিয়ান হোটেল ঘিরে ছিলে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। কয়েক দিন ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযানে থাকা পুলিশের তৎপরতায় অনেকের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়ালেও সভার পর সে রকম কিছু হয়নি।