বিএনপিকে ঠেকাতে রাজপথে থাকবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি আন্দোলনে নামলে তা প্রতিহতে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2017, 12:57 PM
Updated : 12 Dec 2017, 12:57 PM

এই জোটের সভাপতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার তথ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে বৈঠকে এই ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ‘হাত ধরাধরি’ করে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে তারানা বলেন, “খালেদা জিয়া যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, আন্দোলন করবেন; আমরা বলতে পারি- সেই আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট রাজপথে থাকবে।

“বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট যেভাবে অগ্নি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিল, আবারও যদি জনগণকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায়ের কৌশল অবলম্বন করেন খালেদা জিয়া ও তার দল, আমরা কিন্তু জনগণকে নিয়ে রাজপথে থাকব।”

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটকে ঐক্যবদ্ধ শক্তি উল্লেখ করে তারানা বলেন, “এখানে শুধু শিল্পী নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকরা রয়েছেন। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যখনই দেশে কোনো ক্রান্তিকাল উপস্থিত হয়, আমাদের একদিন বা দুদিন সময় দিলে দুই-তিন হাজার সমর্থক নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে সক্ষম।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিল্পীরা নির্ভীক। আমরা অবশ্যই শান্তিপ্রিয় কিন্তু প্রয়োজনে আমরা রাজপথে থাকতে পারি, লাঠিপেটা খেতে পারি। আমরা কখনও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হই না।”

শেখ হাসিনার সরকার শুধু রুটিন কাজ করছে না জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, যাপিত জীবনকে রক্ষা করা, গণতন্ত্রকে রক্ষা করে প্রসারিত ও বিকশিত করা, অতীতের সামরিক ও সাম্প্রদায়িক সরকারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল পরিষ্কার করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে কাজ করছে সরকার।

“দারিদ্র্যমুক্ত, বৈষম্যমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, জঙ্গি-সন্ত্রাসমুক্ত শান্তির বাংলাদেশ এবং দুর্নীতি-দলবাজীমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করছেন।”

সাংস্কৃতিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগী মিত্র আখ্যায়িত করে ইনু বলেন, বাংলাদেশ যেন কখনও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের রক্তাক্ত পথে পরিচালিত না হয়, এই জায়গায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

“বাংলাদেশ যেন আর হোঁচট না খায়। বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পরে একবার রাজাকার সমর্থিত সরকার, একবার মুক্তিযুদ্ধ সমর্থিত সরকার। এই যে রাজনীতির মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা, এই খেলা বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করেছে এবং অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে।”

জাসদ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগোতো হলে আর রাজাকার সরকার নয়, সেই রাজনৈতিক নিশ্চয়তা দরকার। বাংলাদেশে আর সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হবে না, তার নিশ্চয়তা দরকার। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের পথেই উত্তরোত্তর এগিয়ে যাবে তার একটা গ্যারান্টি দরকার।

“সেই গ্যারান্টি অর্জন করতে হলে জঙ্গি দমনের যে যুদ্ধে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং আর রাজাকার সরকার নয় সেটা নিশ্চিত করতে সেই যুদ্ধে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হবে কিন্তু বাংলাদেশকে যদি মানবিক করতে হয় তাহলে সাংস্কৃতিক কর্মীরা তা করবেন। বাংলাদেশ যদি অসাম্প্রদায়িক না হয়, কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক হয় তাহলে বাংলাদেশ আবার হোঁচট খাবে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই যেখানে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা হাত ধরাধরি করে কাজ করবে।”

ইনু বলেন, “বিএনপি এখনও সংবিধানের চার নীতি, জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণা, ২৫ মার্চের গণহত্যা দিবস মানে না, ৩০ লাখ শহীদ মানে না। যারা এসব মানে না তারা নীতিগতভাবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে মানে না।

“বিএনপি ও খালেদা জিয়া যতক্ষণ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে এসব বিষয় না মানছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মহাশত্রু।

“যারা এসব মানে না তাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকার কোনো অধিকার নাই, তাদেরকে চিরদিনের জন্য ক্ষমতার বাইরে রাখতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করব সাংস্কৃতিকর্মীরা সেই জায়গায় কাজ করবেন।”

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর সাংস্কৃতিক জোটের কর্মীরা তথ্যমন্ত্রী এবং তথ্য সচিবের সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।