ইসি গঠন: এ সংসদেই আইন চায় জাপা

চলমান দশম জাতীয় সংসদেই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আইন প্রণয়নসহ পাঁচ দফা প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির সংলাপে তুলে ধরেছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি।

বঙ্গভবন প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2016, 12:34 PM
Updated : 20 Dec 2016, 07:07 PM

নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বঙ্গভবনের দরবার হলে সোয়া এক ঘণ্টার এই আলোচনায় জাতীয় পার্টির ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপ্রধান জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আমন্ত্রণে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।

“রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলুগলোর মতামত থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটা রূপরেখা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।”

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেবে নতুন ইসি। ওই কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

ওই কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ।

প্রস্তাবগুলো হল- ১. নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা। ২. সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন। ৩. নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন। ৪. বর্তমান সংসদেই আইন পাস পাস করা। ৫. নির্বাচন কমিশনারদের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিগত একাগ্রতা ও সততা, অন্য অফিসে নিয়োগে বিধি-নিষেধ, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়জ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় না থাকা নিশ্চিত করা।

বিরোধী দলীয় নেতা ও পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এম এ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্ন, সালমা ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এসএম ফয়সাল চিশতী, এটিইউ তাজ রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, খালেদ আক্তার ও বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন এ বৈঠকে।

প্রেস সচিব বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই সুযোগকে ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ বলেছেন রাষ্ট্রপতি। জাতীয় পার্টির প্রস্তাবগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।”

এরশাদ তার দলের প্রস্তাব তুলে ধরার সময় এই আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, এতে জাতির আস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

“আলোচনার সময় এইচ এম এরশাদ বলেন, তার দল সংঘাত নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান চায়। তিনি ইসি গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইনি কাঠামো প্রণয়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন,” বলেন প্রেস সচিব।

এরশাদ বেলা ২টা ৫০ এ অধিকাংশ নেতাকে নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছালেও তার স্ত্রী রওশন বাকিদের নিয়ে দরবার হলে ঢোকেন ৩টার ঠিক আগে আগে।

নির্ধারিত সময় বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতি হামিদ দরবার হলে প্রবেশ করার পর শুরু হয় ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কাজী ফিরোজ রশীদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়ে কারও নাম প্রস্তাব করেননি।

সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদের এই সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দিনের আলোচনার পর সংলাপ নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্য আসে দুই পক্ষ থেকেই।

গত ১২ ডিসেম্বর যে পাঁচটি দলকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে আলোচনার তারিখ নতুন করে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।

তিনি বলেন, “জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দেশের বাইরে থাকবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নতুন সময়সূচি শিগগিরই ঠিক করা হবে।”

বুধবার বিকাল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি) ও সাড়ে ৪টায় কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি।