স্পষ্ট হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতার হোতা আ. লীগ: বিএনপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়েরে উপর হামলাস্থল ঘুরে দেখে তাতে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম‌্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2016, 10:12 AM
Updated : 5 Nov 2016, 10:13 AM

তিনি বলেছেন, “দেশবাসীর কাছে আজ স্পষ্ট হয়েছে, কারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হোতা।

“গত ৭ বছরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত রয়েছে, এটি আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট।”

নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর স্থানীয় তিন নেতাকে বহিষ্কার করায় আওয়ামী লীগকে ‘ধন‌্যবাদ’ও জানান এই বিএনপি নেতা।    

“আওয়ামী লীগ তাদের নেতৃবৃন্দকে সাময়িক বহিষ্কার করে ঘটনাটি সামলাবার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগকে একটু ধন্যবাদ জানাতে চাই, দলীয় নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দিয়ে জনসমক্ষে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন।”

এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে হাই কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবিও জানান হাফিজউদ্দিন।

একই সঙ্গে গত ৭ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন হামলার ঘটনার পেছনে শাসক দলের যেসব লোক রয়েছেন, তাদের পরিচয় প্রকাশ এবং ব্যর্থতায় দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি।

“আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বর্তমান অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।”

এক হিন্দু যুবকের ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দুদের দেড় শতাধিক বাড়িতে ভাংচুর-লুটপাট চালানো হয়।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে শুক্রবার হাফিজের নেতৃত্বে বিএনপির ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল শুক্রবার নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পল্লী ঘুরে আসেন।

একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও ওই এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান ‘কঠোর’।   

গত সপ্তাহের ঘটনার পর পুলিশের পাহারার মধ‌্যে বৃহস্পতিবার রাতে নাসিরনগরে হিন্দুদের আরও কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার ওই এলাকা ঘুরে দেখে শনিবার রাজধানীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন হাফিজ।

নাসিরনগরে হাফিজউদ্দিন আহমেদ (শুক্রবারের ছবি)

ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “নাসিরনগরে আমরা কোনো রাজনীতি করতে যাইনি। ঘটনাস্থলে এর ব্যাপকতা দেখে আমরা বেদনাহত হয়েছি, যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই ধরনের হামলা আমাদের স্তম্ভিত করেছে।

“হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বাহিনী ওই হামলার সময়ে তাদের কোনো কাজে লাগেনি। বরং তাদের প্রতিবেশী মুসলিম পরিবারগুলো এসে মন্দির ভাঙার কাজে বাধা দিয়েছে এবং হিন্দু পরিবারগুলো যখন আশ্রয় নিতে গেছেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছে।”

দ্বিতীয় দফায় হামলার জন্য পুলিশের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ।

“পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব একেবারেই নেই। তারা তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে এই কারণে যে এটি একটি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দায়েরের কাজেই এই পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সময় ব্যয় হয়।”

আওয়ামী লীগ নেতারা হিন্দুদের নিজেদের ‘ভোট ব‌্যাংক’ ভাবলেও তারপরেও কেন তাদের উপর এই হামলা হচ্ছে- প্রশ্ন করে তার উত্তরও দেন হাফিজ- “এর প্রধান কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আর ভোটের প্রয়োজন নেই। সেজন্য তারা এসব করছে।

“দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা হিন্দু সম্পত্তি গ্রাস করেছেন। পুরনো জেলাগুলোতে স্বাধীনতার অব‌্যবহিত পর থেকেই হিন্দুদের সম্পত্তিগুলো আওয়ামী লীগের লোকেরা দখল করে রেখেছেন এটা প্রমাণিত সত্য।”

হিন্দুদের রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সবার সহযোগিতা প্রত‌্যাশা করেন বিএনপি নেতা।

নাসিরনগরে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা দিতে সৈয়দ একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে অচিরেই বিএনপির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নাসিরনগর সফরকারী বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য সঞ্জীব চৌধুরী, গৌতম চক্রবর্তী, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, সুশীল বড়ুয়া, আবদুল আউয়াল খান, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।