সহযোগিতার জন্য বিদেশি বন্ধু আছে, প্রভু নয়: কাদের

তার ভাষ্য, দেশের মানুষকে ভালো রাখতে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বন্ধু দেশের সহযোগিতা পাচ্ছেন, সেটা বিএনপির ‘অন্তর্জালার কারণ’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2023, 03:12 PM
Updated : 28 May 2023, 03:12 PM

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিতে সরকার ‘অসন্তুষ্ট নয়’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনাকে সহযোগিতার জন্য অনেক বিদেশি বন্ধু থাকলেও কোনো দেশকেই তারা ‘শত্রু বা প্রভু’ হিসেবে বিবেচনা করেন না।

রোববার বিকালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সভায় তিনি বলেন, দেশের মানুষকে ভালো রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর যে সহযোগিতার আশ্বাস, এটা বিএনপির অন্তর্জালার কারণ হচ্ছে।

“সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে কটূ কথা তারা বলে, বিরূপ সমালোচনা করে। এই মহলটি অতীতে বাংলাদেশ ধ্বংস করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে ঠিক করে মেরামত করছে। এটা তাদের পছন্দ হয় না।”

বিএনপির রাজনৈতিক ধারার সমালোচনা করে কাদের বলেন, “এরা তাকিয়ে থাকে বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে, বাংলাদেশের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারে না। এর ফলে নিষেধাজ্ঞা-নিষেধাজ্ঞা বলে চাতকের মত কত অপেক্ষা। এই বুঝি নিষেধাজ্ঞা এল… শেখ হাসিনা চলে গেল! এই কটূ কথা কত যে শুনলাম। অবশেষে কী নিষেধাজ্ঞা এল? ভিসানীতি! এতে সরকারের কী হল? কিছুই হল না।”

গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ওই ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এই নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা দেওয়া হবে না।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন সেদিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই’ তাদের এ পদক্ষেপ। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে যারা এগিয়ে নিতে চায়, তাদের সবাইকে সমর্থন দিতে এই নীতি ঘোষণা করেছেন তিনি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নীতিকে ইতিবাচকভাবে দেখার কথাই বলছেন। তাদের ভাষ্য, এই নীতি কেবল সরকার নয়, বিরোধী দলের ওপরও বর্তাবে, ফলে বিএনপিকে তাদের ‘জ্বালাও-পোড়াও’ রাজনীতির বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

অন্যদিকে বিএনপি ওই ভিসা নীতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, সেখানে বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিরই প্রতিধ্বনি’ এসেছে।

বিএনপি এই ভিসানীতি নিয়ে ‘নাটক সাজাচ্ছে’ অভিযোগ করে কাদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকার মোটেও ‘বিচলিত নয়’।

“বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, শত্রু নেই। বিদেশে বঙ্গবন্ধুর কোনো প্রভু ছিল না, শেখ হাসিনারও কোনো প্রভু নেই।

“সহযোগিতা করার মত বন্ধু আমাদের আছে। একাত্তরে বন্ধু দরকার ছিল, সে বন্ধু আমরা পেয়েছি। যারা শত্রুতা করার তারা করেছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য আমরা পূরণ করতে পেরেছি। বাধা দিয়ে কিছুই করতে পারেনি।"

ভিসানীতি নিয়ে সরকারের ‘অসন্তুষ্ট হওয়ার বা মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই’ বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

বিএনপি ‘আক্রমণ করে নাটক সাজাচ্ছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো অবস্থাতেই আক্রমণ করা যাবে না। নির্বাচন অবধি তৃণমূল পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ অব্যাহত রাখতে হবে।

“বিএনপি দেখাতে চাইছে আমরা আক্রমণকারী। কেরানীগঞ্জে আক্রমণকারী তারা, অথচ বিদেশিদের কাছে প্রচার করেছে আক্রমণকারী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাজেই কোনো অবস্থাতেই আক্রমণ করবেন না। আক্রমণ করব না। কিন্তু আক্রমণ করলে ছাড় দেওয়া হবে না।"

গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের প্রসঙ্গ ধরে কাদের বলেন, “গাজীপুরে আমরা হেরে গেছি, কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ ভোট দিলে আছি না থাকলে নেই।”

নেতাকর্মীদের বিভেদের রাজনীতি না করে ঐক্য জোরদার করার আহ্বানও জানান তিনি।

বিএনপি ‘গণ্ডগোল বাধানোর চেষ্টা করছে’ অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, "কেরানীগঞ্জে যে নাটকটি সাজালো… আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর করল। নাটক সাজিয়ে ইচ্ছে করে গোলমালের সৃষ্টি করল… খাগড়াছড়িতেও তাই।

“আমাদের অনেক কর্মী আহত হল, এখন তারা বুঝাতে চাইছে আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, নির্বাচন অবধি তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের শান্তি সমাবেশ আমরা অব্যাহত থাকবে। কারও সঙ্গে পাল্টাপাল্টি করার কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।"

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের চীন সফর এবং আগামীতে ভারত সফর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, "আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল চীনে গেছে। এগুলো পার্টি টু পার্টি কন্ট্যাক্ট। এসব বৈঠকে অনেক কিছু আলোচনা হতে পারে।

“রাজনীতিরে পরিস্থিতি নিয়ে, বিভিন্নভাবে মতবিনিময় হতে পারে, বৈশ্বিক রাজনীতি… এটা পার্টি টু পার্টি কন্ট্যাক্ট। পিপল টু পিপল কন্ট্যাক্টকে সুদৃঢ় করার জন্য।"

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া,  প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ,  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন।