নির্বাচন বর্জন: বিভ্রান্তির শঙ্কায় আব্বাস জানালেন ‘কী বলেছেন’ সেদিন

তিনি বলেন, “সরকার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে, আমি সেটাই বলতে চেয়েছিলাম।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2024, 11:41 AM
Updated : 11 March 2024, 11:41 AM

বিএনপির নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য কিছু গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তা দলে ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে’ জানিয়ে সাংবাদিকদের ডেকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।

সোমবার দুপুরে ঢাকার শাহজানপুরের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, “দুয়েকটি ‘সরকার সমর্থিত’ সংবাদপত্র আমার বক্তব্যের খণ্ডিত কিছু অংশ বিকৃতভাবে তুলে ধরেছে। …তাতে আমার আমার দলের এবং দেশের অনেক মানুষ একটু বিভ্রান্ত হতে পারে সেই। বিভ্রান্তি কাটানোর লক্ষ্যে আজকে আমার এই সংবাদ ব্রিফিং।”

আব্বাস বলেন, ‘‘কারাগার থেকে মুক্তির পর গত পরশু দিন আমি একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। সেই কর্মসূচি ছিল লিফলেট বিতরণের।

“ওই কর্মসূচিতে আমার বক্তব্যটা ছিল এ রকম, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের কোনো দাবি মেনে নেয়নি। ফলে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। জনগণের দাবি যদি মেনে নিত, বিএনপি নির্বাচনে যেত’।

“এই বক্তব্যটাই কয়েকটি পত্রিকা টুইস্ট করেছে… বহু কথাবার্তা। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে, সেজন্য আজকে আমি আপনাকে এখানে এটা পরিষ্কার করলাম।

 “সরকার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনের বাইরে রাখার চেষ্টা করেছে, আমি সেটাই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার এই বক্তব্যকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।”

গত শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আব্বাস। গত ২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের দিন গ্রেপ্তারের পর ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর সেটিই ছিল প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি।

খালি পেটে বড়ই ভালো নয়

ইফতারে রড়ই রাখার বিষয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুনের বক্তব্য নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, “একজন মন্ত্রী বলেন, বড়ই দিয়ে ইফতার করেন। সেই মন্ত্রীর বোধহয় অভিজ্ঞতা নাই যে, খালি পেটে বড়ই খেলে কত মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

‘‘এই কারণে উনারা খেজুর, আঙুর, বিভিন্ন দামি ফল-ফ্রুট দিয়ে ইফতার করে থাকেন। জনগণে জন্য বলতে হবে বড়ই খেতে হবে, জনগণের জন্য বেগুনির (বেগুন দিয়ে তৈরি) বদলে পেঁপেনি (পেঁপে দিয়ে তৈরি) খেতে হবে, জনগণের জন্য এ সমস্ত ওদের জন্য না।”

অবশ্য শিল্পমন্ত্রীও আব্বাসের মতোই বলেছেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে গণমাধ্যমে এসেছে।

রোববার ঢাকায় এক আয়োজনে তিনি বলেন, “তারা পাগল হয়ে গেছে। আমি খেজুরের পরিবর্তে বলিনি, মাইন্ড ইট; আমি বলেছি খেজুরের সঙ্গে, খেজুরের সসাথে… ইফতারের প্লেটটা আমাদের দেশীয় ফল দিয়ে সাজান।”

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘‘আমি আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো একটা সময় পাইনি যে, এই দেশের লোক স্বস্তিতে রমজান পালন করেছে।

“আমি দেখলাম পত্রিকায় খবরটি এসেছে, গাজায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেই গাজায়ও ঈদের মত রমজান মাস শুরু করেছে। আমাদের দেশে সেই অবস্থা নাই। আমি যখন তারাবির নামাজ পড়তে যাব, দেখবেন বিদ্যুৎ নাই, হঠাৎ করে অন্ধকার হয়ে গেছে। বাজারে যাব কিছু কিনতে যাব, দেখব কিনতে কিনতে টাকা নাই, শেষ হয়ে গেছে।

“মাঝে মাঝে কৈ মাছের দাম শুনে অবাক লাগে, ভাবতেই পারি না। ডিমের দাম দাম ২০/২৫ টাকা ছিল। জেলখানায় একটা ডিমের দাম ২০ টাকা। আমি শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। সব মিলিয়ে রমজান মানুষের জন্য কতটুকু স্বস্তিদায়ক হবে, তা নিয়ে অনেক সন্দেহ আছে।”

‘জেলে এমন চিত্র আগে দেখিনি’

১৯৭৮ সাল থেকেই জেল জীবন শুরু হয়েছে জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, এবারের মত অভিজ্ঞতা তার আগে কখনো হয়নি।

তিনি বলেন, “আমি নিরেট মাটির ফ্লোরের মধ্যে শুয়েছি, নট সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়ামের ভাঙাচোরা আঁকা-বাঁকা প্লেট, অ্যালুমিনিয়ামের গ্লাস, এর মধ্যে পানি খেতে হয়েছে। প্রথম যখন জেল খাটি, তখন আমার বয়স ২৭, আজকে ৭৭ ছুঁই ছুঁই। এবারের জেলখানা একটু ব্যতিক্রম।”

‘‘যখনই আমরা বলি, ‘আমার একটু বাইরে হাঁটব, আমার ডায়াবেটিস আছে, আমার হার্টের সমস্যা আছে, তখন বলে, ‘না স্যার, হাঁটা যাবে না।’

“আমরা বলি, ‘ওই যে হাঁটছে’, তারা বলেন, ‘ওরা আর আপনারা এক নন, দেওয়া যাবে না।’

“এভাবে কোনো সুবিধা জেলখানায় আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। এমনকি চিকিৎসা সুবিধাও তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কথা বললে বলে, ‘না, স্যার নিষেধ আছে কোনো ডাক্তার আনা যাবে না।”

জামিন পেয়ে নিজেকে ‘খাঁচায় পোষা মুরগির মত’ লাগছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যখন দরকার নিয়ে যাবে আবার।”