“আমরা চাই, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার যে ক্ষমতা, সেটা তারা প্রয়োগ করতে পারুক আর এটাতে যাকে তারা ক্ষমতায় নিয়ে আসবে, আমরা মেনে নেব।”
Published : 21 May 2024, 06:01 PM
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের আত্মতুষ্টির কোনো কারণ দেখছেন না দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “অনেকেই খুশি হবেন যে, আজিজের স্যাংশন এসেছে। আমি মনে করি যে, ওটা হচ্ছে আরেকটা বিভ্রান্ত করা। এরকম বিভ্রান্ত হচ্ছি আমরা সবসময়। র্যাবের বিরুদ্ধে হয়েছে, পুলিশের নয় জন কর্মকর্তা র্যাবে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও স্যাংশন হয়েছিল। এতে করে কি তাদের (সরকার) সেই ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? বন্ধ হয় নাই।
“সেজন্য বলছি, নিজেদের পায়ে নিজেদের দাঁড়াতে হবে, নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং নিজের শক্তি নিয়েই এদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমার নিজেদের ঘর যদি সামলাতে না পারি, অন্য কেউ ঘর সামলে দেবে না।”
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার তথ্য সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা হাজার বার বলছি, সব সময় বলছি, গোটা দুনিয়া বলছে যে, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে আছে। এখন তারা অস্বীকার করে, তারা দুর্নীতি করে না। এখন দেখেন, আজকেই খবর এসেছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার পরিবারসহ। কেন? দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা এবং জনগণের বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করায়।”
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্রযন্ত্রকে, আপনারা ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন সেনাবাহিনীকে, ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন বিচার বিভাগকে, প্রশাসনকে এবং আজকে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন, ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছেন।
“এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, মিডিয়ার ভাইয়েরা আছেন, তারাও এখন মন খুলে, প্রাণ খুলে রিপোর্ট লিখতে পারেন না, প্রতিটি শব্দ চয়নে চিন্তা করতে হয়- এজন্য জেলে যেতে হবে কিনা, মামলা খেতে হবে কিনা। এই হচ্ছে দেশের বর্তমান অবস্থা।”
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের উদ্যোগে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এই আলোচনা সভা হয়।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “অনেক সময় ভুল ব্যাখ্যা করা হয় যে, আমরা নাকি (সরকার) উৎখাত করতে চাই। আমরা উৎখাতের কথা বলিনি, উৎখাত করতে যাব কেন?
“আমরা ভোটের অধিকার চাই, সেই ভোটের মধ্য দিয়ে আমরা তোমাদেরকে পরাজিত করব। সেই ভোটের অধিকার অর্জন করার জন্য আমাদের সবাইকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইব্রাহিমের উদাহরণ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা না চাইলে কোনো কিছু দেবে না আমাদের। অবশ্যই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা বার বার বলেছি, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন চাই। আমরা চাই, মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার যে ক্ষমতা, সেটা তারা প্রয়োগ করতে পারুক আর এটাতে যাকে তারা ক্ষমতায় নিয়ে আসবে, আমরা মেনে নেব।”
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শফিউল আলম প্রধানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ উলামা দল, কৃষক দল, জাগপার নেতারা।