ছাত্রলীগের জয়-লেখকের ‘অনিয়মের’ তালিকা যাচ্ছে শেখ হাসিনার কাছে

সংগঠনের শতাধিক নেতার সই করা ‘অভিযোগপত্রটি’ সিলগালা করে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের এক সহ সভাপতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2022, 07:07 PM
Updated : 9 Sept 2022, 07:07 PM

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন ‘অনিয়মের’ তালিকা তৈরি করেছে সংগঠনটির অন্য নেতারা; যেটি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়েছেন তারা।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন সহ সভাপতিসহ শতাধিক নেতা অভিযোগ জানানোর পক্ষে সম্মতি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি কামাল খান, যিনি বিষয়টি সমন্বয় করছেন।

শনিবার সকালে সংগঠনের এসব নেতার সই করা ‘অভিযোগপত্রটি’ সিলগালা করে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে বলে শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।

তার অভিযোগ, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের কোনো সীমা নেই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই মাস পরপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির পুরো তিন বছর মেয়াদে মাত্র একটি সভা হয়েছে।

অন্যদের কোনো দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “সাধারণ সভা না হওয়ায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ মূলত অকার্যকর। সাধারণ সভা হলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উপস্থাপন করা যেত। যেহেতু সাধারণ সভা হচ্ছে না, তাই আমরা আমাদের অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সই নিয়ে অভিযোগপত্রটি দিচ্ছি।”

এবিষয়ে ছাত্রলীগের আরও দুই সহ সভাপতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন।

সহ সভাপতি সোহান খানের অভিযোগ, “তাদের (জয়-লেখক) বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড়সম অভিযোগ। তারা যে সমস্ত কমিটি দিয়েছেন সেগুলোর ৯০ শতাংশ কমিটিতেই দুর্বল নেতৃত্ব এনেছেন।

“এছাড়াও কমিটিগুলোতে অছাত্র, বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত অপরাধীদের স্থান দিয়েছেন। তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমানতের খেয়ানত।“

ছাত্রলীগের আরেক সহ সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন খানের দাবি কেন্দ্রীয় পরিষদের মতামত ছাড়াই দুজনের সিদ্ধান্তে সংগঠন চলছে।

নির্বাহী সংসদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, একক সিদ্ধান্তে সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে ছাত্রলীগকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক যে কমিটিগুলো হচ্ছে, সেখানে অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে, অর্থের বিষয়টা কিন্তু গণমাধ্যমে খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে।”

ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের আগে তাদের আগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নেতৃত্বে এসেছিলেন।

নেতৃত্ব পাওয়ার ১০ মাস পর ২০১৯ সালের ১১ মে তারা ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা করে।

এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন ও রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তখন ওই সময়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি দুই শীর্ষ নেতাকে পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দাবিতে সরব হয়ে উঠেছে। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে অভিযোগ যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্য নেতারা।

তারা জানান, সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্প্রতি জয়-লেখক ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ‘সংবাদ বিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে ঘোষণা করছেন। এক্ষেত্রে ‘অনিয়মের’ অভিযোগও আনেন তারা।

কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই অগাস্টের শুরুতে একদিনে জেলা, উপজেলা মিলে ১১টি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ ছিল ৩০টির মত। সেগুলোতেও চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে কয়েকশ প্রার্থীকে শূন্যপদে পদায়ন করার অভিযোগও রয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

ছাত্রলীগের একটি অংশের অভিযোগ, জয়-লেখক নেতৃত্বে আসার পর থেকেই তারা বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন। তারা হল ছেড়ে দুটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন। তাদের একাধিক গাড়ি ব্যবহারের নজির রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এসব নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবরও বেরিয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জয় ও লেখককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তাদের বক্তব্য মেলেনি।