“যে সময় যে সরকার আসে, তারা তাদের সুবিধামত সংবিধান সংস্কার করে। কেন? এটা তো আমাদের দলিল, রাষ্ট্রের দলিল, জনগণের দলিল”, বলেন তিনি।
Published : 04 Nov 2024, 11:04 PM
সংবিধান সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিয়ে রাজধানীতে রাজনীতিক ও আইনজীবীদের এক আলোচনায় সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান কার্যকরের স্মরণে এই আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “যে সময় যে সরকার আসে, তারা তাদের সুবিধামত সংবিধান সংস্কার করে। কেন? এটা তো আমাদের দলিল, রাষ্ট্রের দলিল, জনগণের দলিল। সেটাতে হাত দেওয়ার আগে কিন্তু চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।”
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র সংস্কারের যে কথা বলছে, তার বাইরে নয় সংবিধান। এ বিষয়েও একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান আলী রিয়াজ সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলেছেন। তবে কমিশনের প্রতিবেদনের পর সরকার কী করবে, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।
খোকনের দল বিএনপি তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছে, সংস্কার করতে হবে নির্বাচিত সংসদকে। দলটির পক্ষ থেকে সংবিধান সংশোধনের বিষয়েও আগেও সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
সংবিধান সংশোধন কমিশনের প্রধান প্রথমে করা হয়েছিল আইনজীবী শাহদীন মালিককে, তবে তিনি এই দায়িত্ব নিয়েও ছেড়ে দেন।
এই আলোচনায় অংশ নেন তিনিও। বলেন, “আমাদের দেশের স্বাধীনতার আইনি ভিত্তি হল এই সংবিধান। অনেকেই বলছেন, এখন দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ লাগবে। আরে বাবা দুনিয়াতে খুঁজে বার করে দেন।”
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অনির্বাচিত সরকার সংবিধান সংস্কার করতে পারে না, বিধিবদ্ধ করতে পারে না। সংস্কার শুধু সুপারিশ করতে পারে নির্বাচিত সরকার। সেজন্য নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে।”
আলোচনা সভায় ৭২ এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. কামাল হোসেন বলেন, “ক্ষমতার মালিক হিসেবে আমাদের সকলেরই একটা ভূমিকা আছে, যে সঠিকভাবে এটা প্রয়োগ হচ্ছে কিনা। মূল জিনিস হল-জনগণকে সতর্ক করতে হবে।”
সংবিধান সংস্কারের পূর্বশর্ত হিসেবে সংবিধানের ‘সঠিক ব্যাখ্যা’ করা জরুরি মত দিয়ে তিনি বলেন, “সংবিধান তো একটা দলিল, এটা নিজে থেকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। ব্যাখ্যা মানুষ করে। সর্বোচ্চ কোর্ট করে। কিন্তু কোর্টও ভুল করতে পারে। তাই পুরো প্রক্রিয়ায় জনগণকে সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে।
“যেভাবে সংবিধান ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, যেভাবে সরকার এটাকে ব্যাখ্যা করছে নিজের কাজের মধ্য দিয়ে, সেসব ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। যখনই মনে হবে ভুল হচ্ছে, সে ভুলকে যুক্তি দিয়ে তুলে ধরা এবং চেষ্টা করা যে অন্যান্য নাগরিকরাও যাতে সে মতকে সমর্থন করে। তখন দেখা যাবে সরকারকেও সে ভুলের সংশোধনের ব্যাপারে বাধ্য করা যায়।”
গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সংবিধান দিবসকে জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এই মুছে দেওয়া চলবে না বাংলাদেশে। আমরা ৪ নভেম্বর আমাদের সংবিধান দিবস এটা অক্ষুণ্ন থাকবে।”
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। সেই থেকে এই দিনটি সংবিধান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এই দিবসটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।