সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: শেখ হাসিনার দরিদ্রবান্ধব নীতির প্রতিফলন

Published : 1 March 2022, 05:57 PM
Updated : 1 March 2022, 05:57 PM

কল্যাণকামী রাষ্ট্রের মূল কর্তব্য হচ্ছে জনগণকে সেবা দেওয়া। বিশেষত জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বা যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়াই হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল কাজ।  আমরা বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে দেখেছি। তবে এই ধরনের সুবিধা উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় দেওয়া হলেও বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে এর অনুশীলন তেমন তেমন দেখা যেত না। 

২০০৮ সালের পূর্বে বাংলাদেশের কোনও সরকারই দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় এত ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার সাহস দেখায়নি। দিনবদলের সনদকে সামনে রেখে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার বিভিন্ন ব্যতিক্রমী কর্মসূচি হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে সহায়তা করার অভিপ্রায়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার কর্মসূচি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। 

২০০৯ সালের বাস্তবতায় এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় অন্তর্ভুক্ত কর্মসূচির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত জনগণের হৃদয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে দাগ কেটেছে তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধাগুলো অন্যতম। 

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৩০টির মতো সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশজুড়ে। ২০২১-২০২২  অর্থ বছরের এ সমস্ত কর্মসূচির জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের (৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার) ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মোট  জিডিপির প্রায় ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয় ধরা হয়েছিল মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ যা পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছিল। এই বিপুল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরিদ্রবান্ধব মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। 

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দেশে দরিদ্রতার হার কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৩ বছরে দেশে দরিদ্রতার হার অনেক কমেছে যদিও কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে সরকার দারিদ্র বিমোচনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান কোভিড অতিমারির কারণে সরকারকে বিভিন্ন সময় কয়েক মাস ধরে লকডাউন বাস্তবায়িত করতে হয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য। ফলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় অর্থনীতির দেশ যখন ৩ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শতাংশের ওপরে ছিল। এটি সম্ভব হয়েছে কেবল শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারণে। 

২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা বৃদ্ধি করতে শুরু করে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ১৩০টির মতো কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও সেই কর্মসূচিগুলোতে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে সরকার কোভিডের সময়ে। অতিমারি চলাকালীন খেটে খাওয়া মানুষের দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এককালীন নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ২০২০ সালে। 

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার চারটি প্রধান মোবাইল আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার (নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিওরক্যাশ) ​​মাধ্যমে করোনভাইরাস দ্বারা প্রভাবিত নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবারকে (প্রধাণত শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র এবং দুস্থ) ২৫০০ টাকা এককালীন নগদ সহায়তা দিয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৩৬ লক্ষ পরিবারকে এই এককালিন নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। এই কর্মসূচির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোবাইলে এই সহায়তার অর্থ সরাসরি দেওয়া। সহায়তা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে কিছু অভিযোগ উঠলেও সরকারের তরফ থেকে খুব দ্রুত সে সমস্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। 

এটি ঠিক যে অর্থ সহায়তার পরিমাণ হয়তো খুব বেশি নয় যা দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠি অনেক দিন চলতে পেরেছে। তারপরেও এই ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দরিদ্রবান্ধব মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা সকলেই জানি যে বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের সরকারের পক্ষে চাইলেও উন্নত রাষ্ট্রের মতো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বেশ কয়েক মাস ধরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দরিদ্র জনগণের পক্ষে জীবন-যাপন করা একটু কষ্ট হচ্ছে যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য।

কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে রোজার মাসকে সামনে রেখে সব সময়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এ সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে এই অবস্থায় নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তার জন্য রোজার সময় ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া শুধু দরিদ্রবান্ধব সরকারের পক্ষেই সম্ভব। 

আমরা সকলেই জানি যে আমাদের সম্পদ সীমিত, কিন্তু চাহিদা অসীম। ফলে সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে একটি বিরাট ফারাক রয়েছে। স্বল্প সাধ্যের মাধ্যমে কিভাবে ব্যাপক সাধ পূরণ করা যায় সেটি বাস্তবে প্রমাণ করে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৩ বছরে। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে গেছেন শেষ দিন পর্যন্ত। তার  জীবনের মূল দর্শন ছিল বাংলার গরীব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাবার আদর্শকে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় চেষ্টা করে চলেছেন দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবার জন্য। 

তিনি বাংলাদেশের জনগণ এবং বহির্বিশ্বের কাছে একটি বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন যে- সততা এবং কোনো কিছু অর্জন করার বাসনা থাকলে মানুষের সাধ্য যত কমই থাকুক না কেন, সেই লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব নয়। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে আমরা গর্ব করে বলতে পারি যে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর বুকে। দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির প্রভাবের উপর বিভিন্ন ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। প্রায় সকল ধরনের গবেষণার যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটি হচ্ছে দরিদ্র জনগণের জীবন ও জীবিকাকে এই কর্মসূচিগুলো ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। 

২০০৯ সালে দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নের প্রতিজ্ঞা নিয়ে শুরু করা আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে দারিদ্রের হার কমানো। দরিদ্র জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে দেশ যতই এগিয়ে যাক না কেন সেই উন্নয়ন সার্বজনীন হয় না। এই কারণেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় চেষ্টা করে চলেছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখে হাসি ফোটানর জন্য। প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য নিরলসভাবে প্রতিষ্ঠা পরিশ্রম করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রের কষাঘাতে থেকে বের করে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আর এই কারণেই আমরা বলতে পারি- আওয়ামী লীগ সরকার গরীবের সরকার এবং শেখ হাসিনা দরিদ্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী।