পাট থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ‘হোমিকরসিন’– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে অনন্য উপহার

মো. আনোয়ার হোসেনমো. আনোয়ার হোসেন
Published : 11 June 2021, 10:24 PM
Updated : 11 June 2021, 10:24 PM

'আর নয় পলিথিন, সোনালি আঁশ ফিরিয়ে দিন'- বর্তমান প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে এ শ্লোগানটির কথা মনে এলো। ১৯৯৭ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের ৪০ বছর পূর্তি। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আমাকে। অনুষ্ঠানের ব্যানার ও ফেস্টুনে ব্যবহারের জন্য শ্লোগান তৈরি করছি আমরা। বর্তমানে কাতারের দোহা কর্নেল মেডিকেল কলেজে কর্মরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুজীব অনুপ্রাণ বিজ্ঞানী ড. মো. রুবায়েত হাসান তখন মাস্টার্সের ছাত্র। তার দেওয়া অনেকগুলো শ্লোগানের মধ্যে সোনালি আঁশের ছন্দময় শ্লোগানটি আমাদের মনে ধরলো। ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও পাটের তৈরি কনফারেন্স ব্যাগের গায়ে আমরা লিখেছিলাম শ্লোগানটি। ২৫ বছর আগের শ্লোগানটি এখন মনে করিয়ে দেওয়ার সংযোগটি হচ্ছে- অতি সম্প্রতি নেচার রিসার্চ থেকে প্রকাশিত 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টে' পাট থেকে প্রাপ্ত নতুন অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে বাংলাদেশের একগুচ্ছ প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণাপত্র: A plant endophyte Staphylococcus hominis strain MBL_AB63 produces a novel lantibiotic, homicorcin and a position one variant.

পলিথিনের বদলে সোনালী আঁশ দিয়ে তৈরি সামগ্রী ব্যবহারের দিকে আমরা যাইনি। গত ২৫ বছরে তার ভয়াবহ ফলাফল আমরা প্রত্যক্ষ করছি। পলিথিনের বর্জ্যে শহর-গ্রাম-জনপদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, নদী-খাল-বিল-হাওরের তলদেশ ঢেকে ফেলেছে পলিথিন। বাংলাদেশে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মারাত্মক অনুষঙ্গ বর্জ ব্যবস্থাপনার দিকে সরকার, নীতিপ্রণেতা এবং লুটেরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নজর দেয়নি। ফলে বাংলাদেশের মানুষ সৃষ্ট এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

আরেক ভয়াবহ দূষণের কবলেও পড়েছে বাংলাদেশ। তা হলো- অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ। অনাগত কাল থেকে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানুষ ব্যবহার করে আসছে বিভিন্ন ছত্রাক ও উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক। ১৯২৮ সালে অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিয়াম ছত্রাক থেকে আবিষ্কার করেন সংক্রমণবিরোধী অব্যর্থ মহৌষধ, পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক। এ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মারাত্মক সব সংক্রমণের বিরুদ্ধে আধুনিক কালের অ্যান্টিবায়োটিকের জয়যাত্রা শুরু। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ও অপরিণামদর্শী বহুল ব্যবহারের কারণে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর বিরুদ্ধে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াসমূহ গড়ে তোলে প্রতিরোধ। একের পর এক আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক আসে বাজারে। তারাও অকার্যকর হয়ে পড়ে অচিরে।      

এমন এক প্রেক্ষাপটে সোনালী আঁশের পাটবীজের এক বিশেষ এন্ডোফাইট স্টাফিলোকক্কাস হোমিনিস থেকে নিঃসৃত ল্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের নতুন এক অ্যান্টিবায়োটিক 'হোমিকরসিন' এবং তার ভিন্ন একটি রুপ 'হোমিকরসিন ১' প্রথমবারের মত আবিষ্কার করেছেন গত তিন বছর সময় ধরে একনিষ্ঠ গবেষণারত বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের একটি দল। নতুন এ অ্যান্টিবায়োটিকের নাম 'হোমিকরসিন' তারা দিয়েছেন ব্যাকটেরিয়া (Staphylococcus Hominis) এবং পাট (Corchorus)- জাত উৎসের কথা বিবেচনা করে। জ্যেষ্ঠ দুইজন বিজ্ঞানী ড. হাসিনা খান এবং ড. মো. আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে  অধ্যাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং শাম্মি আখতারসহ একগুচ্ছ নবীন বিজ্ঞানী এ অনন্য ফলাফলটি নিয়ে এসেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ ও জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (বিসিএসআইআর) গবেষণাগারে তিন বছর ধরে গবেষণা চলে। এই  গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে আরও বলবো। তার আগে পাটের এন্ডোফাইট ও ল্যান্টিবায়োটিক নিয়ে দুটো কথা বলবো।

এন্ডোফাইটস হলো- মূলত ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীভুক্ত অণুজীব যারা প্রধাণত বীজের মাধ্যমে  উদ্ভিদের দেহে প্রবেশ করে এবং আন্তঃকোষীয় স্থান জাইলেমে উপনিবেশ স্থাপন করে। এরা সাধারণত উদ্ভিদে আপাত কোনও রোগের লক্ষণ সৃষ্টি করে না বরং উদ্ভিদের সাথে এক পরষ্পর উপকারী সহজাত সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এন্ডোফাইটগুলি মূলত উদ্ভিদ ও ফসলের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং বিকাশ এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এসব কারণে এন্ডোফাইটের প্রতি প্রাণবিজ্ঞানীদের নজর পড়েছে। যদিও উদ্ভিদে বসবাসকারী এসব এন্ডোফাইট সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা, তবে এ কথা জানা গেছে যে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং সুরক্ষা ছাড়াও এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক মানুষের নানাবিধ রোগ চিকিৎসার জন্য কার্যকরী জৈব যৌগিক পদার্থের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উল্লেখ করার মত এমন পদার্থের মধ্যে রয়েছে রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব বা ক্যান্সার-বিরোধী যৌগ, বিভিন্ন উপকারী অ্যালকালয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, অ্যানজাইম এবং রঞ্জক। এসব বিবেচনায় গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের এন্ডোফাইটে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল পেপটাইডের (AMP) সন্ধান শুরু করেন। এসকল অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল পেপটাইডের মধ্যে অন্যতম এক উদাহরণ হলো ল্যান্টিবায়োটিক। এরা সাধারণত গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া যেমন, ব্যাসিলাস, এন্টারোকক্কাস, মাইক্রোকক্কাস, স্ট্রেপ্টোকক্কাস, স্ট্যাফিলোকক্কাস, অ্যাক্টিনোমাইসেটিস এবং এন্ডোফাইটিক ছত্রাকের দ্বারা নিঃসৃত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড। তবে এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া-জাত ল্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে এ গবেষণার আগে কোন তথ্য জানা যায়নি।

এ গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা পাটের এন্ডোফাইট ব্যাকটেরিয়া Staphylococcus hominis strain MBL_AB63 থেকে নিঃসৃত পাঁচটি নতুন ল্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পান। তাদের মধ্য থেকে দুটো ল্যান্টিবায়োটিক, যথাক্রমে, 'Homicorcin' এবং এর একটি ভিন্ন রূপ 'Homicorcin 1'- এর বিশুদ্ধিকরণ, অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে তাদের কার্যকারিতা দেখা, প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে এদের তুলনামূলক চিত্র, নতুন এ পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রিয়া কৌশল জানা এবং কেন এরা উচ্চতাপ কিংবা উচ্চমাত্রার অম্ল বা ক্ষারেও সক্রিয় থাকে- তার অনুপুঙ্খ অনুসন্ধান তারা করেছেন। বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন একগুচ্ছ জিন, যাদের থেকে সংশ্লেষিত হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড লেন্টিবায়োটিক গোত্রের উল্লেখিত অ্যান্টিবায়োটিক। এসব জিনের গোটা ক্রমবিন্যাস নির্ধারণ করে বিজ্ঞানীরা দেখলেন অতীতে প্রকাশিত পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিক Epicidin 280-এর সাথে সাতটি অ্যামিনো অ্যাসিড ব্যতিত পুরো সাদৃশ্য রয়েছে তাদের নতুন আবিষ্কৃত দুটো অ্যান্টিবায়োটিকের।  

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত 'হোমিকরসিন' অ্যান্টিবায়োটিকের বিশেষ গুরুত্বের বিষয়ে একটু বলতে হবে। প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং তার ফলে বিশাল জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে পূর্বে বলেছি। নব আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিকটি একটি পেপটাইড (ছোট প্রোটিন) হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা অনেক কম।  প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিপরীতে, এ পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর গঠন কাঠামোতে প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিডের স্থলে কৃত্তিম অ্যামিনো অ্যাসিড বা ভিন্ন কোন যৌগ প্রতিস্থাপন করে তার গাঠনিক বৈশিষ্টের পরিবর্তন করা সম্ভব। এর ফলে এ পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিকের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি কিংবা তাদের দ্রবণীয়তা বাড়ানো এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি আরও উপযোগী করা যাবে। আশা করা যাচ্ছে, 'হোমিকরসিন' ল্যান্টিবায়োটিক অদূর ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিকের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

আমাদের বিভাগে পাট নিয়ে একনিষ্ঠ গবেষণা শুরু করেন অধ্যাপক হাসিনা খান ১৯৯৮ সাল থেকে। গড়ে তোলেন পাট গবেষণার জন্য একটি আধুনিক ল্যাব। পাটের জীবন রহস্য নিয়ে কিছু মৌলিক গবেষণা সম্পন্ন হয়ে যায় এই ল্যাবে। এর মধ্য দিয়ে সংযোগ হয় হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী অধ্যাপক মাকসুদুল আলমের সাথে ২০০৮ সালে। এর আগের বছর পেঁপেঁ গাছের জেনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। 

২০০৯ সালে মাকসুদুল আলম বাংলাদেশের পাট গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে পাটের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্পে মুখ্য গবেষক হিসেবে যোগ দেন।  তার নেতৃত্বে  বাংলাদেশের তোষা পাটের (Corchorus olitorius 04) জেনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে। এ অর্জনে অধ্যাপক হাসিনা খান ও তার গবেষক দল অবদান রাখেন। পরে ২০১২ সালে মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছত্রাক (macrophomina phaseolina) এবং তার পরের বছর ২০১৩ সালে  সাদা পাটের (Corchorus capsularis CVL1) জেনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হয়। গভীর বেদনা ও পরিতাপের কথা বরেণ্য বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন অকালে। পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের স্বপ্নযাত্রায় সে সময়কার খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। এ বিশাল কাজে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ত্বরিৎ আর্থিক সহায়তা অবারিত করেছিলেন। আরো সুখের কথা বাংলাদেশ সরকার বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ও হাসিনা খানকে বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ 'স্বাধীনতা পুরস্কার' দিয়ে তাদের এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সম্মানিত করেছেন।

আমাদের বিভাগের অধ্যাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম 'নুকাসিন' নামের ল্যান্টিবায়োটিক নিয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। উচ্চমানের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নাল বিশেষ করে ২০১২ সালে অত্যন্ত নামী 'জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি'তে তার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় নুকাসিন অ্যান্টিবায়োটিকের সুনির্দিষ্ট বিক্রিয়া কৌশল নিয়ে। পাটের ল্যান্টিবায়োটিক নিয়ে অধ্যাপক হাসিনা খানের কাজের সাথে তার গবেষণা সংযোগ ঘটে যায়।

অধ্যাপক মো. আফতাব উদ্দিন এ নিবন্ধে উল্লেখিত পাটের অ্যান্টিবায়োটিক 'হোমিকরসিন' বিশুদ্ধকরণ, অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা, নতুন এ অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রিয়া কৌশল জানা এব পেপটাইড অ্যান্টিবায়োটিকের জিনগত বৈশিষ্ট্য খোঁজা– ইত্যাদি কাজে গত তিন বছর ধরে একনিষ্ঠ গবেষণায় রত ছিলেন। জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে তার নিজস্ব ল্যাব ছাড়াও প্রাণরসায়ন বিভাগে অধ্যাপক হাসিনা খানের ল্যাব এবং বিসিএসআইআর ল্যাবে তিনি দিনরাত এ গবেষণা কাজ করে গেছেন।  

আসলে বিজ্ঞান গবেষণা সাধনার বিষয়। এমন সাধনায় নিবিষ্ট ছিলেন অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন। শুধু তাই না, নবীন গবেষক বিশেষ করে প্রাণরসায়ন বিভাগের শাম্মি আক্তারকে তিনি তার অভিযাত্রার যোগ্য সহযোগী করতে পেরেছেন। সেজন্যই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীদের তালিকায় অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনের নাম সর্ব প্রথমে এবং তার পরেই শাম্মি আক্তারের নাম। 

শাম্মি বর্তমানে জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় রত আছেন। যাকে বলে ফ্রন্টিয়ার গবেষণা, তেমন কঠিন ও জটিল তাদের গবেষণাপত্রের সংক্ষিপ্ত বাংলা তর্জমা শাম্মি আক্তারই আমার জন্য করে দিয়েছেন। মাহবুবা ফেরদৌস, বদরুল হায়দার এবং আল আমিন– প্রাণরসায়ন বিভাগের এ নবীন বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কাজে অবদান রেখেছেন এ গবেষণায়। 

গবেষণায় গুরুর প্রয়োজন পড়ে। নবীন বিজ্ঞানী শাম্মি আক্তার, মাহবুবা ফেরদৌস, বদরুল হায়দার ও আল আমিন নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। অধ্যাপক হাসিনা খান, অধ্যাপক আফতাব উদ্দিন এবং অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলামকে গুরু হিসেবে তারা পেয়েছেন। তাদের সম্মিলিত বিজ্ঞান সাধনায় বাংলাদেশ পেয়েছে এক অনন্য অ্যান্টিবায়োটিক 'হোমিকরসিন'। 

এ প্রসঙ্গে ১৯৫৫ সালের পয়লা অক্টোবর তারিখে বিশ্বখ্যাত 'নেচার' জার্নালে প্রকাশিত 'Ramnacin: a New Antibiotic from a Streptomyces sp.'- শীর্ষক গবেষণাপত্রটির কথা মনে এল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার্সে আমার গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক বরেণ্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক কামালুদ্দিন  আহম্মদ  ছিলেন  'রমনাসিনের' মুখ্য আবিষ্কারক। আমাদের প্রাণরসায়ন বিভাগের অদূরে রমনা পার্ক থেকে স্ট্রেপ্টোমায়সিসটি সংগৃহীত ছিল বলে কামাল স্যার এ ব্যাকটেরিয়া নিঃসৃত অ্যান্টিবায়োটিকটির নাম দিয়েছিলেন 'রমনাসিন'। ৬৬ বছর পর প্রাণরসায়ন বিভাগের কৃতি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা পাটবীজ থেকে অমূল্য রত্ন 'হোমিকরসিন' অ্যান্টিবায়োটিক খুঁজে পেলেন। সে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো- নেচার রিসার্চ থেকে প্রকাশিত 'সায়েন্টিফিক রিপোর্টে'। কি অসাধারণ সংযোগ! ২০০৪ সালে আমাদের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক কামালুদ্দিন আহম্মদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। তার সৃষ্ট বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে নিরাশ করেননি।