এখন কেন মসজিদে যাবেন না

আকতার হোসেন
Published : 9 April 2020, 02:42 PM
Updated : 9 April 2020, 02:42 PM

আমার এই লেখা তাদের জন্য না, যারা সবকিছু জেনেশুনেও মসজিদে গিয়ে এখনো নামাজ পড়ছেন বা জুম্মা আদায় করছেন। বরং আমি তাদের জন্য লিখছি যারা সেই সমস্ত লোকদের সন্তান ও পরিবারের সদস্য

আপনারা কি আপনাদের অভিভাবক বা আপনজনদের একটু বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে কিছুদিন মসজিদ, মন্দির, গির্জায় না গেলে এমন কিছু ক্ষতি হবে না। যদি তারা জিদ করে তবে, পরিবারের সদস্য হিসাবে আপনি তাদের জিজ্ঞেস করতেই পারেন- বাইরে গিয়ে যদি করোনাভাইরাস বহন করে ঘরে নিয়ে আসে এবং এতে কারো ভোগান্তি কিংবা মৃত্যু হয় সেটার জন্য কি উনারা দায়ভার নিতে প্রস্তুত আছেন কিনা?

একই কথা প্রযোজ্য অন্য সব ধর্ম ও ধর্ম বিশ্বাসীদের বেলায়। তাদেরও নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বোঝার জন্য বলছি, এই লেখা যখন লিখছি তখন পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ পেরিয়ে গেছে, যাদের মধ্যে ইতিমধ্যে মারা গেছে ৯০ হাজারের বেশি মানুষভয়টা কোথায় দেখেন, ২০১৫ সালে বিল গেটসের করা ভবিষ্যৎবাণী যদি সত্যি হয় তবে, এই করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে ১০ কোটি লোক মারা যেতে পারে।

আপনি বা আপনার নিকট আত্মীয় যদি সেই ১০ কোটির মধ্যে না পড়তে চান তবে বিভিন্ন সময় সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে সেটা মেনে চলতে চেষ্টা করুন এবং পরিবারের সকলকে মানতে বলুন বিশেষ করে এখনও যারা ঘরের বাইরে গিয়ে ইবাদত করছেন তাদের বলুনকোনও অবস্থাতেই মনে করবেন না ধর্মের ব্যাপারে এটা কোন স্থায়ী ব্যবস্থা। এটা হলো আপদকালীন ব্যবস্থা। যে আপদকালীন ব্যবস্থার কারণে মক্কার মসজিদুল আল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীর চত্বরে নামাজ সীমিত করা হয়েছে। পত্রিকায় পড়েছিলাম এই দুটি ব্যতীত সৌদি আরবের বাকী সব মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া ওমারহ হজও আপাতত বন্ধ এগুলো কোন স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নয়। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিমের মনে আঘাত লাগতে পারে সেটা জেনেও ধর্মীয় গুরুজনদের সাথে পরামর্শ করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোন এলাকায় বা দেশের কোন স্থানে মহামারী ছড়িয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে আক্রান্ত এলাকার বাইরে অন্যত্রেও মহামারী ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আশঙ্কা থেকেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন; 'যখন কোন এলাকায় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না'। 

এই হাদিসের আলোকে বলা চলে মহামারীর কালে কোয়ারেন্টিন কিংবা সঙ্গ নিরোধের ধারণা ইসলাম অবশ্যই সমর্থন করে। হজরত রসুলুল্লাহ (সঃ) এর যুগে ভারী বৃষ্টির দরুন মসজিদে জামাত আদায় না করে বাড়িতে পড়ার দৃষ্টান্ত আছে'সূত্র: কোয়ারেনটাইন ও মসজিদে জামাত প্রসঙ্গে ইসলাম / দেশ রূপান্তর ২৭ মার্চ ২০২০

কথা হলো এখন এই অবস্থায় মসজিদে যাবেন না কেন? কারণ, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার নিয়ম হলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে হয়। হাঁটু গেড়ে মাটিতে (বা কার্পেটে) দুই হাতের তালু স্পর্শ করতে হয়। এরপর মাটিতে কপাল ঠেকাতে হয়। সেখানে গিয়ে একজনের থেকে অন্যজন ৬ ফুট দূরে দাঁড়াতে পারবেন না। একজন থেকে অন্যজন ৬ ফুট দূরে দাঁড়ালে কিংবা মাটি বা ফ্লোর স্পর্শ না করলে নামাজের নিয়ম ভঙ্গ হবে। যেহেতু এখনো কেউ এই পদ্ধতির সাময়িক কোন বিকল্প বলে দেয়নি যেমন অসুস্থতার জন্য অনেকে চেয়ারে বসে ইশারায় মাটি বা ফ্লোর স্পর্শ করে সেটার অনুমতি আছে সেরকম কিছু বলা হচ্ছে না, তাই কিছুদিন মানে কয়েকটা দিন মসজিদে গিয়ে নামাজ না পড়ার কথা ভাবা দরকার। একান্তই যদি যেতে হয় তাহলে নিজস্ব জায়নামাজ নিয়ে গেলে কিছুটা রক্ষা। কিন্তু পাশাপাশি দাঁড়ানো বা বসে থাকার রিস্ক থেকেই যায়। যেহেতু নামাজ পড়ার সময় চোখ বন্ধ করে মনোযোগী হতে হয় সেই অবস্থায় কেউ হাঁচি কাশি দিলে পকেট থেকে রুমাল বের করার সময় থাকবে না। তাহলে যা করতে হবে তাহলো মাস্ক মুখে দিয়ে নিজস্ব জায়নামাজ নিয়ে গেলে এবং বাড়ি থেকে অজু করে গেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে যেতে পারে। এটা হলো নিজস্ব প্রটেকশন কিন্তু অন্যের দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

চিন্তা করুন আমাদের দেশে মুসলিম নারীরা মসজিদে যান না কিন্তু তারাও মুসলিম। স্কুল কলেজে পড়ে এমন অনেক মুসলিম মসজিদে যান না, অসুস্থ মানুষ মসজিদে না গিয়ে বাসায় নামাজ আদায় করেন। শ্রমিক কর্মচারী অনেকেই তাদের কর্ম ব্যস্ততার কারণে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারে না। তারাও মুসলিম। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের দৈনন্দিন ব্যস্ততা আর আজকের জীবন এক না। সাধারণ অবস্থায় প্রতিটি নামাজের আগে আমাদের অজু করতে হয়। এটার নিশ্চয়ই বিশেষ কারণ আছে। তাহলে যখন বিশ্বজুড়ে মহামারী চলছে তখন অতিরিক্ত সতর্ক এবং নিয়মনীতি মানতে হবে সেটা বুঝতে কষ্ট হবে কেন? এখন পৃথিবীর সব দেশের সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকতে এবং একজন থেকে অন্যজনের দূরত্ব বজায় রাখতে। এটাই হলো বিশেষ সময়ের বিশেষ প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুন। কেউ সেটা না মানলে বলতে হবে নিজের সওয়াব বা পুণ্যের জন্য অন্যকে তিনি বিপদে ফেলতে চাচ্ছেন। এটা সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয় এবং অপরাধ।

আমরা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ি নিজের সওয়াবের জন্য। ইসলাম বাঁচানোর জন্য না। ধ্যান ও এবাদতের জন্য মসজিদই একমাত্র জায়গা না। আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহকে পাবার জন্য কাবা ঘরের কোন এক কোনায় বসে ধ্যান না করে কেন হেরা পর্বতের গুহায় বসে থাকতেন? সেটা চিন্তা করে দেখেন।   

ইসলাম ধর্ম প্রচারের শুরুর দিকে মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা ছিল ভিন্ন। তখন হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) নিজ মুখে তার কওমের জন্য ধারাবাহিক ভাবে দিক নির্দেশনা ও করণীয় কাজ সম্পর্কে বক্তব্য দিতেন। সেই দিক নির্দেশনার একটি বক্তব্যও অবহেলা করার মত ছিল নাতাই প্রয়োজনের তাগিদে নিকটজন ও সাহাবীরা নিয়মিত মসজিদে যেতেন এখন আর নতুন কারোর পক্ষে কোন কিছু বলা বা লেখার সুযোগ নেই, শুধু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং চর্চা করা ছাড়া।

দেখুন কোরান কী বলে, 'আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম'। সূরা আল মায়েদা / ০৩। 

কাজেই, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ একদিন মিস করলে অন্যদিন শুনতে পারবেন। এছাড়া তখনও যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মসজিদে গিয়ে হাজির হওয়ার একটা ভিন্ন উপকারিতা ছিল। মুসলিম সমাজের মধ্যে একতা এবং ঐক্য অন্যকে আকৃষ্ট করতো। অনেকে উৎসাহ বোধ করতেন। সারিবদ্ধভাবে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে একটি শক্তি প্রদর্শনের ব্যাপারও ছিল। কেননা তখন দলে দলে শত্রু ছিল। বোধ করি সে জন্য একাধিক হাদিসে মসজিদে যাবার উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। এমন কি অন্ধকেও মসজিদে যেতে আমাদের নবী উৎসাহ দিয়েছেন।

মসজিদগুলোতে এখন আরবিতে যে খুৎবা দেওয়া হয় সেটা ৯০ ভাগ সাধারণ মুসুল্লিরা বুঝতে পারেন না (যারা আরবী শিক্ষা নিয়েছেন তাদের কথা ভিন্ন)। শুধু শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে সেগুলো শুনে যেতে থাকেন তারা সরকারী অনুদান নেওয়া অনেক মসজিদে আবার সরকারী আদেশও পড়ে শোনান ইমাম সাহেব। অর্থাৎ ধর্মের পবিত্র যা বাণী তা আপনি ইচ্ছে করলে যেকোনো স্থানে বসে শুনতে বা পাঠ করতে পারেন। মসজিদ হলে ভালো তবে, বিপদ কালীন সময় বা অবস্থা বিবেচনা করে মসজিদে না গিয়েও সেটা করা যায় 

জামাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব সম্পর্কে রাসুল (সা:) বলেন, 'জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়কারী, একাকী নামাজ পড়া অপেক্ষা ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার অধিকারী' (বুখারি হাদিস ৬৪৫, মুসলিম হাদিস ৬৫০)এই বিপদের দিনে নিজের সওয়াব একটু কম আদায় করলে যদি দেশের মানুষ বাঁচে, তাহলে কি সেদিকে মনোযোগী হব না আমরা? মাত্র ২৭ গুণ আর তেমন কি বেশি সওয়াব! যদি এক বছরে কোনও পাপ না করেন কিংবা ১০ বছর কোনও পাপ না করতে হয়, তবে এই ২৭ গুণ করে দুই একটা জুম্মার কিছু সওয়াব কম পেলে কি তেমন ভয় পাবার কিছু আছে? কিছুদিন না হয় জুম্মার নামাজের বদলে বাসায় বসে নিয়মিত জোহরের নামাজ পড়া যেতে পারে। যা বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে এখন পালন করা হচ্ছে।    

সূরা বাকারার ২৩৯ এ নামাজ পড়ার নির্দেশে দেখা যায়, আল্লাহ বলছেন; 'অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী (হাঁটতে হাঁটতে) অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর উপরে' (উট বা বহনকারী)

কি চমৎকার কথা, হাঁটতে হাঁটতেও ইবাদত করা যায়। সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করা বা তাঁকে ডাকার জন্য স্থান কালের চেয়ে মনের ইচ্ছাটাই বড়। তিনি তো সর্বত্র বিরাজমান

'তাঁর কুরসি আকাশ ও জমিন ব্যাপ্ত' সূরা বাকারা /২৫৫।

'পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহরই। অতএব, তোমরা যেদিকে মুখে ফেরাও সেদিকেই আল্লাহ বিরজামান'। সূরা বাকারা ১১৫।

'আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুত: আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই' সূরা বাকারা /১৮৬।

কাজেই বলা যেতে পারে, মসজিদই একমাত্র ইবাদত বন্দেগি করার স্থান নয় তাহলে মহান আল্লাহর উপস্থিতি থাকার সব কথাতেই মসজিদ শর্ত হিসেবে থাকতো।  অতএব, গুরুত্ব উপলব্ধি করে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ মানে বাঁধা দেওয়া না। শুধু তাই নয়, প্রমাণ আছে বৃষ্টির কারণে, অসুস্থতার কারণে, যুদ্ধের কারণে নামাজ, ওজু, রোজা নানাভাবে করা ও পড়ার অনুমতি রয়েছেযখন একজন খেলোয়াড় মাঠের কোণায় নামাজ আদায় করেন তখন আমাদের অনেকে তাকে বাহবা দেই। এবার কিছুদিন ঘরে নামাজ আদায় করে আপনি বাহবা নিচ্ছেন না কেন?

কুয়েতের মসজিদ থেকে আজানে বলা হয়েছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নামাজ আদায় করতে। ঢাকার সরকারী আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো আলমগীর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে এবং মানুষের সুরক্ষায় সৌদি আরব এবং উপসাগরীয় দেশগুলো কুরআন ও হাদিসের সাথে মিল রেখেই মসজিদে নামাজ আদায় স্থগিত করেছে। (সূত্র: মসজিদের চেয়ে আপাতত বাড়িতেই নামাজ আদায় উত্তম; ইসলামি চিন্তাবিদ / ইউ এন বি /২৬ মার্চ ২০২০।)

কাজেই জেদাজেদি না করে অর্থাৎ আল্লাহ যাকে বলেছেন 'ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই' সূরা বাকারা /২৫৬ সেটা মেনে চললে দেশ ও দশের উপকার হবে। সরকার ও দেশবাসীকে সাহায্য সহযোগিতা করা দোষের কিছু না। স্বয়ং আল্লাহ তার বান্দাদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন'হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন' সূরা মুহাম্মদ /০৭

২৫ মার্চ ১৯৭১ রাত এগারোটার পর থেকে একটানা গুলি চলেছিল, কার্ফু দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছিলদুদিন পর ২৭ মার্চ কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্ফু তুলে নেয়। সম্ভবত ২৭ মার্চ (ঢাকায়) ছিল শুক্রবারকজন সেদিন মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েছেন? নিউজিল্যান্ডে টেরোরিস্ট অ্যাটাকের পর মসজিদ বন্ধ ছিল। তখন মসজিদে না গিয়ে অনেকেই ঘরে বসে নামাজ পড়েছেনপাকিস্তান আফগানিস্তানে কতদিন পরপর মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। সেসব মসজিদে তখন কে নামাজ পড়তে যান? যে কথা বোঝাতে চেষ্টা করছি তাহলো এখন একজন মানুষ থেকে অন্য মানুষকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবেএবং এই ব্যবস্থা স্বল্পকালীন। কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না। আমরা মসজিদে যাই দশজনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে অথবা বসতে। কাজেই যে সমস্ত জায়গা সেটা মসজিদ হোক, মন্দির হোক, খেলার মাঠ হোক কিংবা পান্থপথ, সেগুলোকে কিছুদিন এড়িয়ে চলতে হবেবাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে যা দেখা যাচ্ছে মোটামুটি সব জায়গাতেই এটা মানা হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু এলাকার মসজিদের মুসল্লিরাও এগিয়ে এসেছেন এই কাজে সহায়তা  দিতে। তবুও কিছু লোক বলছেন মসজিদে গেলে আমাদের কিছু হবে না। এরা জানে না পৃথিবীতে ২০৯ টা দেশে যে যে কজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার কাছে এই রোগটি গেছে শুধু মাত্র চীনের একজন লোক থেকে। বাংলাদেশেও ঢুকেছে একজনের মাধ্যমে। এই একজন একজন থেকেই রোগটা ছড়াচ্ছে। একজন মানুষই অন্য মানুষকে স্পর্শ করে কিংবা হাঁচি কাশির মধ্যে দিয়ে রোগটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। যেখানে লোক নেই সেখানে রোগ ছড়ানোর ভয় নেই।

ছেলেবেলার একটা খেলার কথা মনে পড়ে গেল। অনেকগুলো ইট আঁকাবাঁকা করে সাজিয়ে প্রথম একটা ইটকে আমরা ধাক্কা দিতাম। এরপর লাইন করা একটা ইটের সাথে অন্য ইটের স্পর্শ লাগলে সেটাও পড়ে যেতঘুরতে ঘুরতে নিমিষেই সবগুলো ইট পড়ে যেত দাঁড়ানো অবস্থা থেকেখুব ভালো লাগতো খেলাটা। কিন্তু যদি কোন কারণে একটা ইট থেকে অন্য ইটের দূরত্ব কিছুটা বেশি হতো মানে যা অন্যকে স্পর্শ করতে পারতো না তখন পেছনের ইটগুলো না পড়ে গিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে থাকতো। বর্তমান কোয়ারেন্টিন হলো সেই একের থেকে অন্যের ফাঁক খুঁজে নেওয়া। এই ফাঁক খুঁজে না পেলে ইটগুলোর মত আমরাও শুয়ে পড়বো। ইতিমধ্যে যা শুরু হয়ে গেছে আমাদের দেশে।