মহামারী থেকে পদ্মা সেতু: হাসিনাবিরোধীরা শিক্ষা নিলো কি!

তন্ময় আহমেদ
Published : 24 May 2022, 12:55 PM
Updated : 24 May 2022, 12:55 PM

জনগণের জন্যে অক্লান্ত কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে হাত দিয়েছেন, সফল হয়েছেন। তবুও শিক্ষা নেয়নি তার বিরোধীরা। তাকে বিপাকে ফেলতে সবসময় সক্রিয় থেকেছে বহু চক্র। তবুও তাদের মুখে বারবার ঝামা ঘষে দেওয়ার মতো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। তারপরও কি শিক্ষা হচ্ছে বিরোধীদের?

এক দশক আগে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হয় তখন এই বিরোধীরা বিশ্ব ব্যাংকে গিয়ে ধর্ণা দেয়, প্রকল্প দেরি করাতে টালবাহানা শুরু করে। একপর্যায়ে ধৈর্য্য হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির ঘোষণা দেন। তার সেই সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা বলার চেষ্টা করেছিল 'নিছক পাগলামি' হিসেবে। তবে সেই সেতুর নির্মাণ এখন প্রায় শেষ। আগামী ২৫ জুন ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এটি হবে হাসিনাবিরোধী চক্রের মুখে চপেটাঘাত।

একইভাবে করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বজুড়ে লক্ষাধিক প্রাণহানির পর অনেকেই বলার চেষ্টা করেছিল বর্তমান সরকারের ব্যর্থতায় দেশে 'কেয়ামত' আসছে। কিন্তু নিক্কেই রিকভারি ইনডেক্স বলছে, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সবচেয়ে চমৎকার প্রতিরোধ করতে পেরেছে। এই ইনডেক্সের সঙ্গে কানাডার আদালতের রায়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাল্পনিক দুর্নীতির অভিযোগ বাতিলের একটি মিল রয়েছে। যে অভিযোগে বলা হয়েছিল পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। এতে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। অথচ সেতু আজ বাস্তব।

শুধু তাই নয়। অর্থনীতিতেও ব্যাপক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বড় প্রতিবেশী ভারতকে শুধু ছাড়িয়েই যাচ্ছে না বরং কয়েকশ ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যেখানে ২০১৩ সালেও বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ভারতের অর্ধেক ছিল। উদাহরণটি এ কারণেই দিলাম যে, অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশেও নাকি শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হবে।

শুধু সরকার বিরোধিতার জন্যে জনগণকে উসকে দিতে বহু অপপ্রচার চালিয়েছে এসব চক্র। তাদের জন্যে একটি পরিসংখ্যান বলা যেতে পারে। গত এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল এই মুহূর্তে যা ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক রেমিট্যান্স ছিল ২.০৯ বিলিয়ন ডলার।

শেখ হাসিনা যখন দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তখন ধর্মীয় মৌলবাদী একটি চক্র শুরু করে আরেক চক্রান্ত। বিএনপির মতোই সরকারের বিরুদ্ধে স্বাধীন সাংবাদিকতার নামে নেত্র নিউজের মতো বিরোধী চক্র গলা চড়িয়ে গিয়েছে। মহামারী কাটিয়ে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার যখন প্রশংসিত হচ্ছে, বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে তখন এই উঁচু স্বরকে নিচু করার সময়ও এসেছে।

বিতর্কিত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান ও ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি অফ দ্য ইউএস মিলে ক্ষমতাসীনদের সরিয়ে দিতে 'ইউরোমাইডান' ধরনের মিডিয়া হাইপ তৈরির চেষ্টা করছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় আদালতে গণ্ডগোলের পরে বার্গম্যানের 'আমিই বোকা' মন্তব্য করার মধ্যে দিয়ে কামাল হোসেনের ওভাররেটেড এই জামাইয়ের কূটচাল পরিষ্কার হয়েছিল।

২০১৩-১৪ সালে মূলধারার গণমাধ্যম তার সংবাদগুলো প্রকাশ করেনি। অখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রতিবেদনগুলো সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ প্রতিটি প্রগতিশীল মহলে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে। নিহতদের পরিবারের অনেক সদস্য তাকে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী ও ভণ্ড হিসেবে আখ্যা দেয়।

পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ ও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কথিত স্বাধীন সাংবাদিকদের প্রচারের দিকে নজর দেওয়া যাক। নেত্র নিউজের এক প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, মহামারী করোনায় দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এ ছাড়া ভারতের সীমান্ত বন্ধ করা নিয়েও সমালোচনা করা হয়।

সেই ঘটনার প্রায় দুই বছর চলে গিয়েছে। এখন ফলাফল সবার সামনে পরিষ্কার। অন্য দেশের তুলনায় মহামারী থেকে ক্ষতি এড়াতে সরকার কতটা আন্তরিক ভূমিকা রেখেছে সেটা জনগণ দেখেছে।

শেখ হাসিনা সবকিছুতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইউনিসেফ তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, পেরু, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনকে 'কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সাফল্যের গল্পে' তালিকাভুক্ত করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ দুই ডোজ করে টিকা নিয়েছে। এ ছাড়া টিকা দেওয়ার হার দ্রুত বেড়েছে।

নিক্কেই কোভিড-১৯ রিকভারি ইনডেক্সে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সূচকের সর্বশেষ সংস্করণ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৮০ স্কোর নিয়ে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কম্বোডিয়া এবং রুয়ান্ডার চেয়ে পরে অবস্থান করছে।

ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরে বার্গম্যান লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যুর যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

একইভাবে দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামোর উদ্যোগ পদ্মা বহুমুখী সেতু থেকে বিশ্ব ব্যাংক যেভাবে অর্থ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেটাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি নিয়ে কানাডার আদালতে যে অভিযোগ হয়েছিল সেটাও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বোঝা যায় দুর্নীতিবিরোধী প্রচারের নামে মূলত তারা সর্বাত্মকভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছে, যেমনভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারও তারা বাধাগ্রস্থ করেছিল।

২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিক, দুর্নীতিবিরোধী ব্যক্তি গুজব ছড়াতে শুরু করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালেসহ বিভিন্ন সংস্থা তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলে।

বিদেশী অর্থায়নে চলা দুর্নীতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রধানের একটি কুখ্যাত উদ্ধৃতি তুলে ধরা যাক। কোন প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বব্যাংককে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "দেরিতে হলেও এটি (অর্থায়ন বন্ধ) হওয়া দরকার ছিল।" এমনকি সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পরেও টিআইবি এক বিবৃতিতে বলেছে, অভিযোগ থেকে মনোযোগ সরাতেই সরকার অর্থের বিকল্প উৎসের কথা বলেছে।

তবে প্রধানমন্ত্রী সেইসময় কারো কথায় কান দেননি। চুপ থেকে কাজ করে গেছেন। ফলে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। পশ্চিমা মিডিয়া ও জাতিসংঘ তার প্রশংসা করছে।

এসব অপপ্রচারের একটা অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সরকারকে বিপাকে ফেলা। এর মূলে রয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদী এজেন্ডা প্রচারের চেষ্টা। যা বাস্তবায়নে তারা পাবলিক বাসে আগুন জ্বালিয়ে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার মতো কাণ্ড করেছিল। এরাই আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর জয়ের চিৎকার করেছে।